জাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অসংলগ্ন আচরণের অভিযোগ আরেক অধ্যাপকের

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:১১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গনিত বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আলমের বিরুদ্ধে অসংলগ্ন আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার ও তার ভাই আবুল বাশার।
বাড়ির মেইন গেট বন্ধ থাকায় এই অসংলগ্ন আচরণ করেন অধ্যাপক সাব্বির। তারা সবাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড (অরুণাপল্লী) আবাসিক এলাকায় একই বিল্ডিংয়ে থাকেন।
গত ১৮ ও ১৯ অক্টোবর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড (অরুণাপল্লী) আবাসিক এলাকায় সাব্বির আলমের বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (২১ অক্টোবর) অরুণাপল্লীর সাধারণ সম্পাদক বরাবর অসংলগ্ন আচরণের অভিযোগ এনে পৃথক অভিযোগপত্র দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার এবং তার ভাই অরুণাপল্লীর বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার।
অধ্যাপক কবিরুল বাশার তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় আমাদের বাসার ফ্ল্যাট মালিক প্রফেসর সাব্বির আলম মাতাল অবস্থায় আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অকথ্য ভাষায় আমাকে এবং আমার মৃত বাবাকে বকাবকি করেন। আমাদের রাস্তায় দায়িত্বরত গার্ডকে জিজ্ঞেস করলে তার সত্যতা মিলবে। বাড়ির মেইন গেট বন্ধ থাকার কারণে তিনি এই অসদাচরণ করেন।
অপরদিকে অরুণাপল্লীর বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার তার দায়েরকৃত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, গত ১৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে প্রফেসর সাব্বির আলম আমাকে ফোন করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেছেন এবং তার বাড়ির গেইট খুলে দিতে বলেন। আমি একজন বয়স্ক, অসুস্থ মানুষ। গভীর ঘুমের মধ্যে তার এহেন আচরণ আমাকে মর্মাহত এবং বিষণ্ন করেছে। কোনোভাবেই আমি এই আচরণ ভুলতে পারছি না।
এদিকে অধ্যাপক কবিরুল বাশারের অভিযোগের পর অরুণাপল্লীর সাধারণ সম্পাদক বরাবর পালটা অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন সাব্বির আলম। তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ফ্ল্যাট ক্রয় করার পর থেকেই মালিক হিসেবে আমার অধিকার ক্ষুণ্ন করে আসছেন অভিযুক্তরা (অধ্যাপক কবিরুল বাশার, তার স্ত্রী ও বড় ভাই)। বিল্ডিংয়ের কমন বিষয়গুলোতে তারা নিজেদের পছন্দমতো কর্ম করে এবং কখনই আমার মতামত নেওয়া হয় না। অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময় আমার নামে মিথ্যা ভিত্তিহীন এবং মনগড়া অভিযোগ দেয়, যা সম্পূর্ণ ব্যক্তি আক্রোশ এর বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া গত ১৮ অক্টোবর কাউকে কিছু না জানিয়ে বিল্ডিংয়ের সকল কমন দরজা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন, যা আমাকে ভবনে বসবাস করতে না দেওয়ার জন্য তাদের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ।
তবে অধ্যাপক কবিরুল বাশার তার অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করে বলেন, বাড়ির সকল ফ্ল্যাট মালিক এবং ভাড়াটিয়াদেরকে ইতিমধ্যে মেইন গেইট এবং পকেট গেটের চাবি সরবরাহ করা হয়েছে। বলা হয়েছে রাত ১১ টার পরে কেউ বাসায় ফিরলে নিজ দায়িত্বে গেট খুলে প্রবেশ করতে হবে। আমি আমাদের বাসায় কেয়ারটেকারকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি। কারণ প্রফেসর সাব্বির আলমসহ আরও দুইজন প্রায় এক বছর কমন চার্জ প্রদান করেন না। এমতাবস্থায় আমরা বাসার মেইনটেইনেন্স খরচ, জেনারেটর, লিফটের খরচ, সিঁড়ি মোছার খরচ, কমন সকল বিদ্যুৎ বিল এবং কেয়ারটেকারের বেতন ও অরুণাপল্লীর উন্নয়ন ফি দিয়ে আসছিলাম। তারা যেহেতু কমন চার্জ প্রদান করেন না তাই আমরা কেয়ারটেকারকে বাদ দিয়েছি। আগে তিনি রাতে বিভিন্ন সময়ে বাসায় ফিরতেন এবং কেয়ারটেকার গেট খুলে দিতেন। এখন তাই তিনি রাগান্বিত হয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে বকাবকি করে আমাকে গেট খুলে দিতে বলেন।
এবিষয়ে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সাব্বির এবং আমি ১০ নম্বর রোডের ২৩৭ নম্বর বাড়িতে থাকি। সাব্বির চারতলায় থাকেন, আমি তিনতলায় থাকি। বিভিন্ন সময়ে তার অসংলগ্ন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি। আমার বড় ভাইয়ের (আবুল বাশার) ৬৭ বছর বয়স। এই অসুস্থ মানুষটাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তাই আমি অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক সাব্বির আলম গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগটি বানোয়াট। আমি মাতাল ছিলাম এবং তাকে ধর ধর বলে চিৎকার দিয়েছি এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। সেদিন আমাদের না জানিয়ে তার স্ত্রী বিল্ডিংয়ের মেইনগেটের ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে আমাদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এসময় আমি বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে ডাকি। তার ভাইকে কল দিয়ে তার বাসার কেয়ারটেকারকে পাঠাতে বলি তালা খোলার জন্য। তখন আবুল বাশার বলেন যে তার (কবিরুল বাশারের) স্ত্রী তালা দিয়েছেন। তার মা-বাবাকে নিয়ে গালি দেয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটে নাই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের (অরুণাপল্লী) সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।