Logo
×

Follow Us

ক্যাম্পাস

পক্ষে বিপক্ষে: ট্রান্সজেন্ডার হোচিমিন ইস্যু

Icon

বখতিয়ার আবিদ চৌধুরী

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৫০

পক্ষে বিপক্ষে: ট্রান্সজেন্ডার হোচিমিন ইস্যু

ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত, ‘উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভাল’ নামে দুইদিনব্যাপী একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল- ট্রান্সজেন্ডার নারী হোচিমিন ইসলামের। কিন্তু সেখানকার শিক্ষার্থীদের একটি অংশের তোপের মুখে আয়োজক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হোচিমিনের অংশগ্রহণ বাতিল করতে হয়। ট্রান্সজেন্ডার বিরোধীদের দাবি, ট্রান্সজেন্ডার কখনও নারী বা পুরুষ হতে পারে না। একে জেন্ডার ডিসফোরিয়া বলেও আখ্যা দেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে নানা ঘৃণামূলক বক্তব্যও দিতে দেখা যায় তাদের। 

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। হোচিমিনের আলোচনা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার ফলে নির্ধারিত আলোচনা বাতিল হয়। যা বক্তা এবং আয়োজক উভয়ের জন্য দুঃখজনক।

তবে এই ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে ইউজিসি। তারা বলছে, কেবল ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েও তাকে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। যা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শুভকর নয়।

বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত উঠে এসেছে। সামাজিক, ধর্মীয়, আইনগত ও ব্যক্তি স্বাধীনতার নানা দৃষ্টিকোন থেকে প্রসঙ্গটি আলোচিত হচ্ছে। যারা তার অংশগ্রহণের প্রতিবাদ করছেন তাদের বক্তব্য ছিল নারীদের কার্নিভালে ট্রান্সজেন্ডারকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হবে। একজন ট্রান্সজেন্ডার কখনও নারী হতে পারেন না এবং তাকে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলজিবিটিকিউ বা সমকামিতার প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের দাবি হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার এক জিনিস নয়। এখানে তারা হিজড়া বলতে ত্রুটিপূর্ণ লিঙ্গ নিয়ে জন্ম নেওয়া বোঝায় এবং ট্রান্সজেন্ডার বলতে একজন যে লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছেন সেটাকে অস্বীকার করাকে বোঝায়।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক বলে জানান। তার মতে, ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে জ্ঞানের অভাব থেকেই নানা ধরণের মতভেদ দেখা দিয়েছে এবং এসব বিরোধ দূর করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে এ প্রসঙ্গে বর্তমান প্রতিবেদকের কথা হয়। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এর মিডিয়া স্টাডিজ এন্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী ফাত্তাহ আমিন সিয়াম বলেন, নর্থ সাউথের চিত্রটি অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মনোভাবকেই তুলে ধরে, মোটাদাগে লৈঙ্গিক বৈচিত্রতা প্রশ্নে। নর্থ সাউথে যে ঘটনাটি ঘটেছে তার নিন্দা জানাই। আমি মনে করি  ট্রান্স জেন্ডারদের অন্য দশটা মানুষের মতই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। হোচিমিনের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা স্পষ্টতই একটা বাজে দৃষ্টান্ত, যেখানে ভাবাদর্শিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লৈঙ্গিক বৈচিত্রতা প্রশ্নে সমাজে সহাবস্থান তৈরি করার কথা ছিল।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে পড়ছেন তাওসিফ ইসলাম। এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার কাছে খুব একটা ভালো ছিল না ব্যাপারটা। এর আগে এমন অনুষ্ঠান আমাদের ক্যাম্পাসে আগেও হয়েছে। কিন্তু তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি, বিষয়টি আমাকে আশাহত করেছে। আন্দোলনকারীরা যে অভিযোগ তুলেছে, এটি সে ধরনের অনুষ্ঠান ছিল না। কিভাবে নারীদের চাকরি পাওয়া সহজতর হয় সে বিষয়ে নিয়েই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছিল। যারা আন্দোলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ছাত্র হিসেবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না বলে আমার মনে হয়, কিন্তু তারা সংগঠিত ছিল বিধায় কাজটা করতে পেরেছে। 

ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বাম ধারার বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন হোচিমিন ইসলামের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এর মাঝে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (রাগীব-রনি অংশ) অন্যতম। সংগঠনটির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রেশমি সাবা ও সাধারণ সম্পাদক তানজিমুর রহমান রাফি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “আমরা মনে করি সকল লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের সকল ধরনের নাগরিক অধিকার রয়েছে। ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি সবরকমের অন্যায় আচরণের অনসান ঘটাতে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার আহবান জানাই”।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী সাম্প্রতিক দেশকালকে এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষার মান শুধু পাস করা নয়, এখানে যদি মানবিকতা ও মূল্যবোধের ঘাটতি হয়ে যায়, তাহলে শিক্ষার মান বলে পার পাব না আমরা। যেকোনো মানুষের, সে যেই হোক, যে ধর্ম, যে জাতিগোষ্ঠীরই হোক, তার শিক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সমাজে স্বীকৃত, আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত। এটা শুধু অবমূল্যায়ন নয়, অবজ্ঞা করে এটা যারা করেছে, এ এটিচিউটটা যারা দেখিয়েছে তারা তো আমাদের নাগরিক হওয়ার যোগ্য না। সে জায়গা থেকে আমার মনে হয়, প্রশ্নটা আমাদের তুলতে হবে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে আমরা কি শেখাচ্ছি? এই যে, এখন যে  যুদ্ধ-সহিংসতা চলছে পৃথিবীব্যাপী, আমরাওতো কম যাই না মনে হয়, যে মানুষকে অবমূল্যায়ন করা, সে তো সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি, তার ইচ্ছাকৃত ব্যাপার নাতো এটা। সেখানে এ অবমূল্যায়ন কেন? কি জন্য? 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫