সুনসান নীরবতা, পাখির কলতান ও কাঠবিড়ালীর পদচারণায় মুখর ঢাবি

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ২৩:৪০

কলাভবন। ছবি- ঢাবি প্রতিনিধি
কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশ জুড়ে যে ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত, এবার সেই ক্যাম্পাস যেন সুনসান নীরবতায়। যদিও ক্যাম্পাসের প্রধান প্রবেশমুখগুলোতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি। বলা চলে বিশৃঙ্খলা এড়াতে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। বাহারি পাখির কলতান এবং কাঠবিড়ালির পদচারণার মুখর সুনসান নীরব ঢাবি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সরেজমিনে ক্যাম্পাস এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। এদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় হল ও পুরো ক্যাম্পাস রয়েছে শিক্ষার্থী শূন্যতায়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজ চালু রয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের হল বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল। এমন উদ্ভট পরিস্থিতির মধ্যে একজন শিক্ষকসহ ৩২ জন হল ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
তিনি বলেন, বর্তমানে যারা হলে আছেন, তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। এছাড়া তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারা যেন প্রয়োজন ছাড়া বাহির না হয় এবং বহিরাগত কাউকে হলে যেন না আনেন। যদি একান্তই প্রয়োজন হয়, তারা যেন অবশ্যই হল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া পাশাপাশি কোন নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন ভবিষ্যতে কোনো হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের মতো নিয়োজিত থাকবে এবং হলগুলোয় মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেওয়াসহ পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর কক্ষগুলো সংস্কার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ করছে।
এতে ক্যাম্পাস ও হল খুলে দিতে এরই মধ্যে পাঁচ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেগুলো হলো-
ঢাবি ক্যাম্পাসে কোনো নিরাপরাধ শিক্ষার্থী যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে অবস্থান করবেন, যাতে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্বের মতো নিয়োজিত থাকবে। দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলের কক্ষগুলো সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে এই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেজন্য শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কাম্য। হলগুলোতে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীরাই থাকবে। প্রশাসনের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই সিন্ডিকেটের এক জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এছাড়া হলে অবস্থানরত সকল শিক্ষার্থী সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই পুরোপুরিভাবে হল ছাড়তে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।