
অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর উপ-উপচার্য ও ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ঢাবির ৩০তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।
অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা লোহাগাড়া উপজেলার বিখ্যাত চুনতি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্র-পিতামহ খান বাহাদুর নাসির উদ্দিন খান ও অবিভক্ত ভারতের একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। পিতামহ কবীর উদ্দিন আহমেদ খান ছিলেন আসাম-বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের ডেপুটি কালেক্টর ও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট। একারণে, অত্র এলাকায় তাদের বাড়িটি 'ডেপুটি বাড়ি' হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। অধ্যাপক নিয়াজ খানের পিতা ড. শফিক আহমদ খান অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন এবং গত শতকের ষাটের দশকের প্রথম দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণ রসায়ন বিভাগ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইউরোপের সারায়েভো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিস্টিংশন-সহ ডি.এস.সি ডিগ্রী অর্জন করেন । তিনি বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রূপে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন পাকিস্তান সুপিরিয়র ফরেস্ট সার্ভিসে, পরবর্তীতে বিসিএস (বন) যোগদান করেন এবং বন সংরক্ষক হিসেবে চাকুরীরত অবস্থায় ১৯৯২ সালে ইন্তেকাল করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অফ ফরেস্ট্রি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মেধা ও মননের বংশানুক্রমিক পরস্পরের স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে শৈশব থেকে অধ্যাপক নিয়াজ খানের অসাধারণ প্রতিভা ও ধী-শক্তির প্রকাশ ঘটতে থাকে থাকে। অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি এবং চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় তিনি মানবিক শাখায় কুমিল্লা বিভাগে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতেও তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
অধ্যাপক খান মর্যাদাপূর্ণ কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাননাসহ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা সম্পাদন করেন। গুগল স্কলার থেকে পাওয়া তথ্যমতে উনার ৩৫০০+ সাইটেশন রয়েছে বিভিন্ন গবেষণা সম্পাদনার উপর। তিনি দু' শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও বইয়ের রচয়িতা।
এছাড়াও তার তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দেশে এবং দেশের বাইরের ১৭ জন পিএইচডি গবেষক এবং ৮ জন এমফিল গবেষক গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। পরবর্তীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) এর উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অফ গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্টে এর সিনিয়র একাডেমিক এডভাইজার এবং সেন্টার অফ রিসোর্সেস এন্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যুক্ত আছেন।
দেশ ও সমাজের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে তরুণকাল থেকেই নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত দু'পর্যায়েই তিনি কমিউনিটি ভিত্তিক বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সাথে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি ও পরিবেশবাদী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তিনি আন্তর্জাতিক রোটারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত। পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্যের সোয়ানসির রোজহিল কমিউনিটি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল পার্ক ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ এবং এথনিক মাইনরিটি কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য, থাইল্যান্ডের আন্দামান ফাউন্ডেশন এর কমিউনিটি ফরেস্ট পাইলট ইনিশিয়েটিভের ভিজিটর অফ অনার এবং চট্টগ্রামের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর প্রস্টিটিউট এন্ড স্ট্রিট চিলড্রেনের অনারারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান অবসরে বই পড়তে এবং ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। তিনি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের পাশাপাশি এক সুখী, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন।