দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, নৈরাজ্য, ঘৃণা, ও বিদ্বেষী আচরণের বিষয়ে সরকারকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক (ইউটিএন)। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে খোলা চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবের এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠি পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।

খোলা চিঠি পাঠকালে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অসহিষ্ণু, আক্রমণাত্মক ও নৈরাজ্যবাদী জমায়েত আমরা লক্ষ করছি। সেসব জমায়েত থেকে অপছন্দের গোষ্ঠী ও দলের বিরুদ্ধে শুধু হিংসাত্মক কথাবার্তাই বলা হচ্ছে না, ক্ষেত্রবিশেষে সে সব মানুষের ওপর হামলাও চালানো হচ্ছে। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘবদ্ধ হিংস্রতায় নিহত হয়েছেন তিনজন মানুষ। অপরাধীদের ধরতে গিয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা হামলায় নিহত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষকে।

তিনি আরও বলেন, রাস্তায় ও পর্যটন অঞ্চলে নারীদের ওপর হামলা, নিগ্রহ এবং চরম হেনস্তা করা হয়েছে। শ্রমিকদের নিগৃহীত করেছেন মালিকপক্ষের গুণ্ডারা। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও দপ্তরে ছোট ছোট অজস্র হিংস্রতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। মাজার, মন্দির, শিল্প-স্থাপনা ভাঙচুর থেকে শুরু করে বাউল ও আহমেদিয়াদের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। এসব দুর্ঘটনা দীর্ঘদিন সমাজের মধ্যকার নানাবিধ অমীমাংসা ও গণতন্ত্রহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আমরা মনে করি। এভাবে চলতে থাকলে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের অভাব তীব্রতর হবে এবং সংকট উত্তরণে সরকারকে আরও বেগ পেতে হবে। এই ক্রান্তিকালে বর্তমান সরকারের নির্মোহ ভূমিকা পালন ও আশু পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসতে হবে যে, তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কীভাবে নিশ্চিত করবেন এবং অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তাদের অবস্থান কী করে স্পষ্ট করবেন। সহিংস জমায়েতের সংঘবদ্ধ হিংস্রতা থেকে ভিন্ন মত বা সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবেন তা সুস্পষ্ট করতে হবে।

কবে নাগাদ প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই চিঠি পাঠানো হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, আমরা চেষ্টা করব আজকেই পাঠানোর তবে আজ সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ দু-একদিনের মধ্যেই চিঠি পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক (ইউটিএন) গত এক দশক ধরে এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লাগাতার বিভিন্ন কার্যক্রমে অবস্থান নিয়ে আসছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের উত্তাল সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ দৃষ্টি কেড়েছে এ নেটওয়ার্ক।