শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেছেন আবু সাঈদ

বেরোবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৩৫

নিহত আবু সাঈদ। ফাইল ছবি
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, রংপুর বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আবু সাঈদ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি ইবতেদায়ী জেনারেল শিক্ষক (ইংরেজি ও বাংলা বিষয়) পদে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। পরীক্ষায় আবু সাঈদের রোল নম্বর ছিল ২০১২৫৬২৯৭।
আবু সাঈদ ২০০১ সালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। স্থানীয় জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপরে স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন।
২০১৮ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ২০২০ সালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন তিনি। আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
চলতি বছরের জুনের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন আবু সাঈদ। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
গত ১৬ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। আবু সাঈদ এ আন্দোলনে সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সেসময় তাকে একটি লাঠি হাতে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে দেখা যায়। তার সঙ্গের আন্দোলনকারীরা যখন কিছুটা পেছনে ছিলেন, তখন তিনি পুলিশের একেবারে কাছাকাছি গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
সেসময় পুলিশের একজন সদস্য তাকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি ছুড়তে থাকে। যা আবু সাঈদের বুকে-পেটে আঘাত হানে। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন আরও বেগবান হয়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে টানা ১৬ বছর দেশ শাসন করা শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
জানা যায়, গত ১১ জুলাই আবু সাঈদ নিহত হওয়ার আগে ক্যাম্পাস থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিল নিয়ে বের হতে চাইলে ছাত্রলীগ বাধা দেয়। এক পর্যায়ের চর থাপ্পড় দেন আবু সাঈদকে। এই ট্রমা নিয়েই পরের দিন ১২ জুলাই পরীক্ষা দেন আবু সাঈদ।
আবু সাঈদের সঙ্গে আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, ১১ তারিখ ক্যাম্পাসে মিছিল করার পর ১২ তারিখ ছিল আবু সাঈদ ভাইয়ের নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষা। ওই দিন সকালে আমাদের মিটিং করার কথা ছিল। কিন্তু আবু সাঈদ ভাই বলেন, আমার জীবনের এইটা প্রথম পরীক্ষা। পরীক্ষা দেব কিনা? কিছুই পড়িনি আন্দোলনের কারণে। বললাম ভাই পরীক্ষা দিয়ে আসেন আমরা বিকেলে মিটিং করব।
তিনি আরও বলেন, আজ ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ভাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু আবু সাঈদ ভাই আজ নেই। আমরা শুধু বীর সাঈদ ভাইকেই হারাইনি, হারিয়েছি মেধাবী এক শিক্ষার্থীকে।