‘হাসান আজিজুল হক দুই বাংলার চিন্তক মানুষ ছিলেন’

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১৭:১০

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। ছবি: রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেছেন, ‘কথাসাহিত্যে বাংলাদেশের একজন রাজপুত্র ছিলেন হাসান আজিজুল হক। তার কথার মাধ্যমে, লেখা ও প্রকাশের মাধ্যমে অনন্য সৃষ্টি করে গেছেন। তার লেখার ধারণা ও চিন্তাচেতনার মাধ্যমে তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, শিক্ষক ছিলেন এবং দুই বাংলার মাঝে একজন চিন্তক মানুষ হিসেবে নিজেকে স্থাপিত করেছেন।’
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য আরো বলেন, ‘হাসান আজিজুল হক যেহেতু আমাদের গর্বের ধন। তাই আমরা তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শায়িত করেছি। যাতে যেকোনো সময় আমরা তার কবরের পাশে এসে দাঁড়াতে পারি। আমরা তার লেখা ও কর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হই।’
এর আগে হাসান আজিজুল হকের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন শেষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া পাঠ করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বিভাগ ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। পরে আজ দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এসময় রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের চিন্তা-চেতনা ও দার্শনিক ব্যাপ্তি অনেক গভীর, যেটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। তিনি বেঁচে থাকা অবস্থায় অনেক প্রবন্ধ, গল্প লিখেছেন। তার বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছি। হাসান স্যার দেশের কথা, সমাজের কথা অকপটে তার লেখায় বলে দিতেন। তার কর্মকাণ্ড জাগ্রত থাকুক। স্যারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে উনার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
এদিকে আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক (অবঃ) উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, ‘মানুষের সাথে মানুষের ব্যবধান এটা কতো ঠুনকো, কতো অকিঞ্চিৎকর ও কতো কৃত্রিম! সেটা পাকিস্তান হোক আর আজকের বাংলাদেশ হোক। সব জায়গার মানুষের যে একই চেহারা, যেটা আমাদের দেশে আমরা জেনে এসেছি সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই। সেটিই ঘুরে ফিরে আজকের বাস্তবতায় তারই নির্যাস হাসান আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।’
স্মরণসভায় এ রবীন্দ্র গবেষক আরো বলেন, ‘আমরা এখানে তাকে পরিচিত করেছি কথাশিল্পী হিসেবে। এই কথাটি যথার্থ তবে যথেষ্ট নয়। তিনি শুধুই বরেণ্য কথাশিল্পী নন, তিনি এই পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্মাবার যে দায় এবং সম্ভাবনা দুটোকে পূর্ণতায় নিয়ে গেছেন। এর জন্য কথা শিল্প তার মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। তিনি কথা শিল্পের বাহিরেও সবসময় নিজেকে পূর্ণ মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত করেছেন।’
এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য যে তিনি আমাদের একজন। কিন্তু কখনো মনে হয়নি তিনি আমাদের একজন, তিনি সব মানুষের একজন। সেই জায়গাতেই তাকে আমরা দেখেছি। তিনি ক্রমাগত নিজেকে প্রসারিত করে গেছেন। তিনি নিজেকে আরো মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। তার শেষ লেখা পর্যন্ত কোথাও কিন্তু শেষের লক্ষণ নেই।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক (অবঃ), রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে প্রমুখ।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর হাসান আজিজুল হক ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে তিন দশক ধরে অধ্যাপনার পর ২০০৪ সালে অবসর নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭০ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে একুশে পদক এবং ২০১৯ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।