বিশ্ববিদ্যালয় বাসে শিক্ষার্থীকে মারধর, প্রতিবাদে মানববন্ধন

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২২, ১৬:০৫

মারধরের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি : জাবি প্রতিনিধি
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে একদল সিনিয়র শিক্ষার্থীর এক জুনিয়র শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (১৬ মে) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর গত বৃহস্পতিবার (১২ মে) রাজধানীর শ্যামলির টেকনিক্যাল মোড়ে এলাকায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো. সংগ্রাম ইসলাম গণিত বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আ.ফ.ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। সংগ্রাম ইতোমধ্যে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আদনান শাকিলসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে দায়ী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১২ মে ক্যাম্পাস থেকে বঙ্গবাজারগামী বিকেল ৪টার বাসে উঠেছিলেন সংগ্রাম। টেকনিক্যাল মোড়ে পৌঁছানোর পর বাসচালক ব্রেক কষলে সংগ্রাম সামনের দিকে ঝুঁকে যান এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহাদাতের গায়ের উপর পরে যান। এতে সংগ্রাম মাথায় ও হাতে আঘাত পান। সংগ্রাম আচমকা ব্রেক করার কারণ জানতে চেয়ে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করলে ৪৭ ব্যাচের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আদনান শাকিলের সাথে তর্ক শুরু হয়।
শাকিল তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেন এবং তারাও নামেন। বাস থেকে নামার পর সংগ্রাম তার পরিচয় দেয় এবং তাদের পরিচয় জানতে চাইলে শাকিল তাকে ঘুষি-থাপ্পড় মারে। সংগ্রাম প্রতিরোধ করতে গেলে শাকিলের সাথের কিছু শিক্ষার্থী তার হাত আটকিয়ে ফেলে। মারধরের একপর্যায়ে শাকিল ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে আসে এবং স্ট্যাম্প দিয়ে সংগ্রামের পা ও পিছনে আঘাত করে। এতে করে স্ট্যাম্প ভেঙে যায়।
পরবর্তীতে সংগ্রামের বন্ধু আশিক বাস থেকে নেমে এসে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। পরে সংগ্রামকে ফেলে শাকিল ও তার বন্ধুরা বাসে উঠে চলে যান এবং ‘তুই কামাল উদ্দিন হলে থাকিস না? তুই শুধু ক্যাম্পাসে আয় তোরে মেরে ফেলবো’ বলে হুমকি দেন।
মানববন্ধনে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইরফানুল ইসলাম ইফতুর সঞ্চালনায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও গণিত বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক বলেন, ‘বাসে আমি ও সংগ্রাম একসাথে বসে ছিলাম। ড্রাইভার হঠাৎ ব্রেক করায় ব্যাথা পাওয়ায় বাসচালকের সাথে সংগ্রামের বাগবিতণ্ডা হয়। এসময় বাসে থাকা সিনিয়র তার কাছে পরিচয় চাইলে সে পরিচয় না দিলে তারা তাকে কলার ধরে বাস থেকে নামিয়ে পাঁচ-ছয় জন মিলে মারধর করে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ ব্যাচের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুজিবুর রহমান শিশির বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে চলাচলের জন্য ক্যাম্পাসের বাসগুলো দেয়া হয়েছে। সেই বাসে ক্যাম্পাসের এক গ্রুপ শিক্ষার্থী সংগ্রামকে আহত করেছে। বাসের চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে সংগ্রাম নির্দোষ ছিল। অতি উৎসাহিত হয়ে নিজের সিনিয়র ভাব প্রকাশ করার জন্য একজন সংগ্রামকে মারতে আসে। তার সাথে আরো কয়েকজন যুক্ত হয়। এসময় তারা তাকে ভোতা অস্ত্র দিয়ে আহত করে যা ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত।’
ভুক্তভোগী সংগ্রাম ইসলাম বলেন, ‘কিছু বলার ভাষা আমার নেই। আমাকে তারা নৃশংসভাবে মেরে আহত করেছে। আমার চিকিৎসা এখনো চলছে। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি যারা আমাকে মেরে আহত করেছে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু হামলাকারীদের সবাইকে ওই শিক্ষার্থী চিনতে পারেননি এজন্য তদন্ত করতে একটু সময় নিচ্ছি। সুষ্ঠু বিচারের জন্য যা যা করার প্রয়োজন আমরা সবটুকু করবো।’
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সহকারী প্রক্টর ও সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইখতিয়ার উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমি সংগ্রাম ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে আ.ফ.ম কামাল উদ্দিন হল অফিসে কথা বলেছি। তখন পর্যন্ত তারা মারধরকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি। আমি বাসের হেলপার ও ড্রাইভারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি এবং সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে টেকনিক্যাল এলাকার পুলিশের সাথে কথা বলেছি। আজকে সংগ্রাম আরেকটা অভিযোগপত্র দিয়েছে এবং আদনান শাকিল নামের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীকে দায়ী করেছে।
তিনি আরো বলেন, অভিযোগ করার পর আমরা শাকিলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাকে পাইনি। এ বিষয়ে তাকে শোকজ করা হবে। এরকম ন্যক্কারজনক ঘটনা যেন আর না ঘটে তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।
মারধরের বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে আদনান শাকিলকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।