পরিবেশ ধ্বংস করে যত্রতত্র গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমসহ অন্যান্য সংকট নিরসনে দ্রুত মাস্টারপ্লান প্রণয়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) নির্মাণাধীন ভবন নির্মাণের সামনে এক সংক্ষিপ্ত মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তারা অবিলম্বে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবি জানান। এসময় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা গাছপালা উজাড় করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কে প্রকল্পের আস্তানা বানাতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়কে মরুভূমি বানাতে চায় এই প্রশাসন। ভোগবাদীরা কেবল অর্থ ও টাকা পয়সা ভোগ করে ক্ষান্ত হয় না তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে দিতে চায়। ভোগবাদীদের ভোগ কখনো শেষ হয় না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারপ্লান প্রয়োগ করে প্রাণ-প্রকৃতির সবচেয়ে কম ক্ষতি করে উন্নয়ন চাই আমরা। এদিকে প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা নাই। প্রশাসনের মাথা ব্যথা শুধু পকেট ভারী করার দিকে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সদস্য শারমিন আক্তার বলেন, মানুষখেকো কিছু দানব আছে যারা মানুষ খয় না বটে কিন্তু মানুষের বসবাসের উপযোগী প্রাণ-প্রকৃতি তারা ধ্বংস করে থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে তার জন্য প্রশাসন দায়ী। বিভিন্ন সময় প্রশাসন বন ধ্বংস করে আর নানা অজুহাত দাঁড় করায়। এভাবে যদি চলতে থাকে আমরা সবাই কে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহবায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, আজকে এসময় আমাদের ক্লাসে থাকার কথা কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদেরকে ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে এখানে দাঁড়াতে হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাস্টারপ্লান প্রণয়নের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারপ্লানের অধীনে ভবন হবে, উন্নয়ন হবে, ক্লাস রুম সংকট নিরসন হবে তা আমরা চাই। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন আমরা চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রধান কাজ শিক্ষার মান উন্নয়ন করা তারা তাদের সেই দায়িত্ব পালন করতে না পারলেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে ধারাবাহিকভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে তাদের অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। তখন তারা আমাদেরকে বলেছিল তদন্ত কমিটি গঠন করে আইবিএ ও আইআইটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিন্তু নামে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই আইআইটি তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা মানববন্ধনের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ–প্রকৃতির ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন চাই না।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, কয়েক দিন আগে চোরের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গাছ কেটেছে। আমরা ২০১৯ সাল থেকে দেখে আসছি প্রশাসন তাদের চৌর্যবৃত্তি জারি রেখেছে। আইবিএ ও আইআইটি চোরের মতো যে গাছ কেটেছিল তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। আজকে আইবিএর কাজ বন্ধ থাকলেও আইআইটির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইবিএর সাথে বিমাতা সুলভ আচরণ করছে আর আইআইটিকে মাথায় তুলে নাচার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমাদের মনে হয় এখানে একধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন আছে। বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রশাসন ফ্যাসিবাদী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এর জবাব দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই যথেষ্ট।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh