সদ্যই বিদায় নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তাকে পালিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। এরই মাঝে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৪ আগস্ট রবিবার সকাল ৯ টায় বিষবিদ্যায়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার উদ্যোগে জুম প্ল্যাটফর্মে একটি সভা করা হয়। সভাটি মূলত ছিল শেখ হাসিনা সরকারকে সাপোর্ট প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে মানববন্ধন করার প্রস্তুতি সভা। সেই সভায় ভিন্ন মত প্রকাশকারী শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হয়, দেওয়া হয় অশোভন বক্তব্য। এমনকি গত ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদে তাদের সামনে থেকে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। সেই শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে যাওয়া শিক্ষকদের নানাভাবে ভর্ৎসনার শিকার হতে হয় মিটিংয়ে।
উপাচার্যের উপস্থিতিতে সেই সভায় আওয়ামীপন্থী বলে পরিচিত শিক্ষকদের একটি অংশ ছাত্রদের সহায়তায় থানায় গিয়ে তাদের সহযোগিতাকারী শিক্ষকদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেন। উপাচার্য বলেন- আগামীকালের মানববন্ধনেই বোঝা যাবে কারা কি? এই অবস্থা সৃষ্টি করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সেক্রেটারি, প্রক্টর ও আরো কয়েকজন শিক্ষক। তারা চিৎকার করে এইসব শিক্ষকদের শাস্তি দাবি করেন। সহকর্মীদের এমন আক্রমণাত্মক আচরণে বিস্মিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন সেইসব শিক্ষকরা।
সমিতির সভাপতি বলেন, কারা নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজের এই বিজ্ঞপ্তিটি প্রক্রিয়াকরণ করলো তাদের খুঁজে বের করা হোক। আলাপের এক পর্যায়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করুন। একাধিক শিক্ষক তাদের অবস্থান তুলে ধরলে আবারো রোষানলে পড়তে হয় তাদের। ইতোমধ্যে শিক্ষকদের এই হুমকি ধমকির অডিও সংবাদকর্মীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন উপাচার্যের ডাকা এমন একটি সভায় তার উপস্থিতি এমন ঘটনার পর উপাচার্য তার পদ থাকার অধিকার রাখেন না। যেহেতু তিনি আওয়ামী স্বৈরশাসনের শাসক দ্বারা নিয়োগকৃত তাই তাকে দিয়ে ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ ভালো কিছু প্রত্যাশা করে না।
উল্লেখ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হলে গিয়ে ছাত্রদের সাথে কেরাম খেলে তার ছবি ফেসবুকে দেওয়ায় রীতিমত ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি। কেননা এরপরই ছাত্ররা পুলিশের আক্রমণের স্বীকার হয়। একাধিক শিক্ষক বলেছেন তিনি একদিকে ছাত্র, অন্যদিকে সরকার উভয়কে হাতে রাখতে চেয়েছেন।
উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার আগেও ফুল কাণ্ডে ব্যাপক সমালোচিত হন। ক্যাম্পাসে তার নামে ইতোমধ্যে নানা অভিযোগের গুঞ্জন শোনা যায়।
এ অবস্থায় পড়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা শিক্ষকরা দুইদিন ভয়ে অতিবাহিত করেন। কেননা যেকোনো সময় সন্ত্রাসীবাহিনী দ্বারা তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় তারা ভীত ছিলেন। শিক্ষকদের একটি অংশ বলেন, যে বাক স্বাধীনতার জন্য এই আন্দোলন বর্তমান প্রশাসন সেই বাক স্বাধীনতাই হরণ করতে চেয়েছে। তাই তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়া দায়িত্ব গ্রহণের পর সকল পদ থেকে ছাত্রবান্ধব শিক্ষকদের সরিয়ে দিয়ে তার অনুগত শিক্ষকদের নিয়ে একক রাজ্যত্ব কায়েম করেছেন।
উল্লেখ, গত ২ আগস্ট তারিখে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজের ব্যানারে একটি বিবৃতি প্রদান করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। প্রথমে এতে ৩৫ জন শিক্ষক বিবৃতি প্রদান করলেও পরে আর ১৪ জনসহ মোট ৪৯ জন শিক্ষক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh