ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হলের ক্যান্টিনে হলটির ছাত্রলীগের ৪৮ নেতাকর্মীর বাকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৯৩ হাজার বা প্রায় ১৮ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের পর থেকে এই টাকা বাকি খেয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
গতকাল শুক্রবার (১৬ আগস্ট) স্যার এফ রহমান হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেতাদের বাকির একটি তালিকা প্রকাশ হয়। মুহূর্তের মধ্যে সেই তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যার একটি তালিকা আমাদের হাতেও এসেছে। এদিকে ক্যান্টিন মালিক হল প্রাধ্যক্ষ অফিসে ওই তালিকা জমা দিয়েছেন।
সেখানে দেখা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন, তিনি খেয়েছেন ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা বাকি।
এছাড়া ওই বাকির তালিকায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হাসান রিফাত ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহিদ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহিম সরকার ৫৫ হাজার টাকা, হল সংসদের সাবেক ভিপি আবদুল আলীম ৬০ হাজার টাকা, হল ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক কামরুল শুভ ১৭ হাজার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবছার হোসেন রানা ৪৫ হাজার টাকা, বাইজিদ ৪৫ হাজার টাকা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজু ১২ হাজার টাকা, ছাত্রলীগ নেতা হারুন ৭০ হাজার ও উচ্ছল ৮৫ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন। এছাড়াও বাকির তালিকায় নাম আসা ব্যক্তিদের সর্বনিম্ন বাকির পরিমাণ আড়াই হাজার টাকা।
তালিকায় থাকা এসব ছাত্রলীগের নেতাদের জন্য আলাদা রান্নাও করা হতো, বলে জানিয়েছেন ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকা বাবুল মিয়া। প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জনের আলাদা খাবার রান্না করা হতো। বিষয়টি স্বীকার করে বাবুল বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ক্যান্টিন থেকে ১৭ লাখ টাকার বেশি বাকি খেয়েছে। যেহেতু তারা টাকা দেয় না তাই আমি খাতায় লিখেও রাখি নাই। আমি একটি রাউন্ড ফিগার করে হিসাব করেছি। এখন তারা আমাকে পথে বসিয়ে পালিয়েছে। আমি প্রভোস্ট অফিসে এই লিস্ট জমা দিয়েছি। আমি এর বিচার চাই, আমার টাকা ফেরত চাই।’
যদিও হলটির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বাকি খাওয়ার কারণে খাবারের মান কম দিয়ে ক্যান্টিন মালিক খাবারের দাম বাড়িয়েছেন এবং মান নষ্ট হয়েছে। এর ফল ভোগ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ বিষয়ে স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ, সাধারণ সম্পাদক মুন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহিম সরকারসহ একাধিক নেতাকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে আবাসিক শিক্ষক মুমিত আল রশিদ বলেন, ‘ক্যান্টিন মালিক বাবুল মিয়া বিষয়টি আমাকে অবহিত করেছেন। আমাদের হল প্রভোস্টকেও বিষয়টি জানিয়েছেন এবং একটি তালিকা দিয়েছেন। প্রভোস্ট মহোদয় বিষয়টি দেখবেন।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চেয়ে হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. রফিক শাহরিয়ারের সঙ্গে মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh