গণপিটুনিতে হত্যা

জাবিতে সমন্বয়ক লাবিবকে অব্যাহতি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সহিংসতায় (গণপিটুনি) অংশগ্রহণের অভিযোগ থাকায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত আহসান লাবিবকে সমন্বয়কের পদ থেকে অব্যাহতির এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৩৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় আহসান লাবিবের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বুধবার রাতের ওই গণপিটুনির ভিডিওতে তাকে দেখা গেছে। গণপিটুনির পর রাতে সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শামীম মোল্লা। গণপিটুনির ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ ছাত্রদলের পাঁচজনকে শনাক্ত করা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন শামীম মোল্লা। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। ভিডিও ফুটেজে লাঠি হাতে শামীমকে মারতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিবকে। এছাড়া লাথি দিতে দেখা গেছে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিককে। এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক পদ থেকে আহসান লাবিবকে আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

এদিকে গণপিটুনির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা তাকে আরেক দফা গণপিটুনি দেয়। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থেকে প্রাথমিকভাবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়। তারা হলেন- সাঈদ হোসেন ভুঁইয়া, রাজু আহমেদ, রাজন হাসান, হামিদুল্লাহ সালমান এবং এম এন সোহাগ।

সাঈদ হোসেন ভুঁইয়া ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া রাজু আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী, রাজন হাসান একই বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী, হামিদুল্লাহ সালমান ইংরেজি ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং এমএন সোহাগ কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিরাপত্তা কার্যালয়ের ভেতরে চেক শার্ট পরিহিত অবস্থায় শামীমকে পেটাচ্ছেন রাজু আহমেদ। এসময় তার হাতে গাছের ডাল দেখা গেছে। এছাড়া রাজন হাসানের গায়ে হাফ হাতা লাল রংয়ের শার্ট দেখা গেছে। হামিদুল্লাহ সালমানের গায়ে হাফ হাতা শার্ট ও সোহাগের গায়ে সাদা টি শার্ট ও চশমা দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, জিন্স প্যান্ট ও শার্ট পরিহিত অবস্থায় শামীমকে মারধর করছেন সাঈদ হোসেন ভুঁইয়া। তবে তারা প্রত্যেকেই মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এ ঘটনায় আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার করা হবে। 

গণপিটুনিতে নিহত শামীম সাভারের আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকার মোল্লা বাড়ির ইয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের (৩৯ ব্যাচ) ইতিহাসের বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh