রাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের কমিটি নিয়ে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৮

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ছবি: ফাইল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ কিবরিয়াকে সভাপতি ও পরমা মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্র ইউনিয়নের কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটির একাংশ।
গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) কমিটির দপ্তর সম্পাদক মুন হোসেনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শনিবার বিকেল ৪ টায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের ৩২তম কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন এই কমিটি গঠন করা হয়। কাউন্সিল সভায় সভাপতিত্ব করেন রাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সদ্য বিদায়ী সভাপতি শাকিলা খাতুন। নবগঠিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মুক্তাদির করিম কুয়াশা, সাংগঠনিক সম্পাদক তাওফিক ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মেহের, দপ্তর সম্পাদক মুন হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক লাবিব হক।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে শাকিলা খাতুন, মিনহাজ হাবিব, গোলাম মোস্তফাকে মনোনীত করা হয়েছে। এছাড়া ৪টি সদস্যপদ খালি রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে কাজের মধ্য দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে সদস্য পদ দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি শেয়ার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না লিখেছেন, ‘রাবিতে নকল ছাত্র ইউনিয়নের আত্মপ্রকাশ। সিপিবিকে অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ হওয়ার চেষ্টায় কোনো কমতি নাই।’
এদিকে কমিটি ঘোষণার পরই এই কমিটিকে ‘গণহত্যাকারী ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা’ উল্লেখ করে যুগ্ম আহবায়ক রাকিব হোসেনের পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের আরেক অংশ।
এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়ন রাবি সংসদের আহবায়ক জান্নাতুল নাঈম ও যুগ্ম-আহবায়ক রাকিব হোসেন বলেন, অতি গোপনে ছাত্র ইউনিয়নের নাম ব্যবহার করে তথাকথিত কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করার দাবি করে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে একটি চক্র। ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম ব্যবহার করে রাতারাতি ছাত্র ইউনিয়নের ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি তথাকথিত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমের মারফতে আমরা জানতে পারি। তথাকথিত এই কমিটির সভাপতি অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা ‘ফ্যানিক’ নামক এক উগ্রবাদী সংগঠনের সভাপতি, যার নাম মাসুদ কিবরিয়া। এমনকি এই ব্যক্তি ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন। ছাত্র, শ্রমিক, জনতার গণআন্দোলনের সময় তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় মতিহার হলে তার রুমও ভাংচুর করেছিলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
তারা আরো জানান, ছাত্র ইউনিয়নের নাম ব্যবহার করে গঠিত তথাকথিত এই কমিটিতে সহকারী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জুলিয়ান ওসকার কুয়াশার নাম দেখা গেছে। তিনিও ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী এবং স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগের রাবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে তার ছবি দেখা যায় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানান তারা।
মাসুদ কিবরিয়ার ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে রবিবার (২৭ অক্টোবর) নতুন কমিটির দপ্তর সম্পাদক মুন হোসেনের পাঠানো পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সভাপতি মাসুদ কিবরিয়া কখনোই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেননি বরং ছাত্রলীগ না করার কারণে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি ছাত্রলীগ তাকে মতিয়ার হল থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথমবর্ষে থাকা অবস্থায় জোরপূর্বক ছাত্রলীগের মিছিলে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর পর তাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ নিয়ে ছাত্রলীগের কর্মী বানিয়ে দেওয়া নিতান্তই কুরাজনীতি।
এ বিষয়ে মাসুদ কিবরিয়া সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেই এই কমিটি হয়েছে। বিদায়ী সভাপতি শাকিলা আপু এসে কাউন্সিল মেনেই এই কমিটি দিয়েছেন, এ সময় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন। এখন যে কেউ চাইলে কম্পিউটারের দোকানে পাঁচ টাকা দিয়ে ব্যানার বানিয়ে নিজেকে ছাত্র ইউনিয়নের বলে দাবি করতে পারে। কিন্তু এটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা আমরা জানি না।’
ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমবর্ষে হলে সিটের জন্য আমি কিছুদিন ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে গিয়েছি। পরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে তারা আমাকে হল থেকে বের করে দেয়। তাছাড়া ছাত্রলীগের রাজনৈতিক মতাদর্শ আমার কখনোই পছন্দ ছিল না।