সাধ্যের মধ্যে উচ্চশিক্ষা মালয়েশিয়ায়

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে দুই লাখেরও বেশি। আধুনিক, প্রগতিশীল ও বহু সংস্কৃতির গতিশীল জীবনধারার দেশটি এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। প্রতি বছর ১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীদের এখানে জমায়েত হওয়ার কারণ হলো সাধ্যের মধ্যে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুবিধা। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন পদ্ধতি, অধ্যয়ন খরচ, বৃত্তিসহ উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন সুবিধাগুলো হলো।

সেরা বিষয়

এমবিএ, কম্পিউটার সায়েন্স (ব্যাচেলর ও মাস্টার্স), ডাটা সায়েন্স (ব্যাচেলর ও মাস্টার্স), মেডিসিন ও হেলথ কেয়ার (ব্যাচেলরস ও মাস্টার্স), ব্যাংকিং ও ফিন্যান্স (ব্যাচেলরস ও মাস্টার্স)।

আবেদনের সময় ও উপায়

মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত দুই সময়ে আবেদন গ্রহণ করা হয়ে থাকে- প্রতি বছরের জুন মাসে আবেদন শুরু হয়। এই আবেদনের সময়সীমা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আরেকটি শুরু হয় নভেম্বরে এবং আবেদনের সময়সীমা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ায় আসার আগে শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী ইএমজিএসের (এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিস) মাধ্যমে অনলাইনে ভিসার আবেদন করতে পারেন। এ ছাড়া পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বা ইএমজিএসের এজেন্টের মাধ্যমেও এই আবেদন করতে পারেন। ইএমজিএস হলো মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অংশ, যা মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইএমজিএস মালয়েশিয়ার সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানে ওয়ান-স্টপ সেন্টার হিসেবে কাজ করে।

আবেদনের সময় সব নথি ক্রমানুসারে আছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। আবেদনকারীকে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি দিতে হয়, যেটি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রগ্রামের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তারিখ থেকে ১৪ কার্যদিবস পর দেওয়া হয় ভিসা অনুমোদনপত্র বা ভিএএল। প্রক্রিয়াধীন সময়টিতে শিক্ষার্থীরা আবেদনের সর্বশেষ অবস্থাটিও জেনে নিতে পারেন। মালয়েশিয়ায় অভিবাসনের সময় শিক্ষার্থীদের ই-ভিসার প্রয়োজন হয়। তারা খুব সহজেই ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন, যা মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যায়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

পূরণকৃত আবেদনপত্র, হাই স্কুল সার্টিফিকেট (স্নাতকের জন্য), ব্যাচেলর সার্টিফিকেট (মাস্টার্সের জন্য), পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বৈধ পাসপোর্ট, মোটিভেশন লেটার, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সার্টিফিকেট (আইইএলটিএস অথবা টোফেল) ও আবেদন ফি প্রদানের প্রমাণপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

ভাষার দক্ষতা 

আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ (প্রগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নির্ভর করে স্কোর পরিবর্তন হতে পারে)।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর করণীয় 

স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র : সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩৫ বা ৪৫ মিলিমিটার)। ১৮ মাস মেয়াদ থাকা পাসপোর্টের প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা (যেখানে পাসপোর্টধারীর ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য আছে) এবং ভিসার সিলযুক্ত পৃষ্ঠাগুলো (যদি থাকে)। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়নের গ্রহণযোগ্যতা/অফার চিঠি। মেডিক্যাল রিপোর্ট। সার্টিফিকেটসহ সব একাডেমিক রেকর্ডের কপি। ৭৫০ মালয়েশিয়ান রিংগিত (১৬ হাজার ৩০২ বাংলাদেশি টাকা) এর ব্যক্তিগত বন্ড। এটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর অধ্যয়ন শেষে ফেরত দেওয়া হবে এই শর্তে যে তিনি মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করেননি। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা সার্টিফিকেট (আইইএলটিএস/টোফেল)। 

অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র : মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি অনুমোদনপত্র। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত কভার লেটার; যেখানে শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করার জন্য আবেদনের কথা উল্লেখ 

থাকবে। পড়াশোনার খরচ ও জীবনযাত্রার খরচের জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রমাণপত্র। শিক্ষার্থী যে দেশ থেকে যাচ্ছেন, সে দেশ থেকে প্রদানকৃত মালয়েশিয়া ভিসার অনুমোদনপত্র প্রাপ্তির পূর্ববর্তী বা প্রি-ভিএএল মেডিক্যাল রিপোর্ট।

পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ

মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামের ভিত্তিতে সাড়ে তিন থেকে চার বছরের স্নাতক অধ্যয়নে খরচ পড়তে পারে  ৯ হাজার ৬০০ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিংগিত। বাংলাদেশি টাকায় এটি প্রায় দুই লাখ আট হাজার ৬৫৯ টাকা থেকে ২৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৬ টাকার মধ্যে। আর এক থেকে দুই বছরের স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে খরচ হতে পারে সাত হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার ৭০০ মালয়েশিয়ান রিংগিত, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার ১৫ টাকা থেকে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৩৯ টাকা।

মালয়েশিয়ায় থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, মেডিক্যাল, মোবাইল ও ইন্টারনেট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট- সব মিলিয়ে প্রায় ১৭০ থেকে ১৮০ মার্কিন ডলার (১৭ দশমিক ৩৬৯ থেকে ১৮ দশমিক ৩৯১ বাংলাদেশি টাকা) খরচ হতে পারে।

বৃত্তির সুবিধা

মালয়েশিয়ার বাইরে থাকা আসা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আছে ঋণ, টিউশন ফি মওকুফ, শিক্ষা তহবিল, অনুদানের ব্যবস্থা। জনপ্রিয় বৃত্তিগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া সরকারি বৃত্তি, মালয়েশিয়া কমনওয়েলথ বৃত্তি, ফেলোশিপ প্ল্যান ও মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ অন্যতম।

খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ

মালয়েশিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার বিরতি বা সপ্তাহান্তের ছুটির দিনগুলো মিলিয়ে সর্বাধিক ২০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর সঙ্গে অবশ্য তাদের স্টুডেন্ট পাসের বৈধতার সময়ও জড়িত। পার্ট-টাইম কাজের জন্য আবেদনগুলো অবশ্যই শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করতে হয়। তবে সবচেয়ে ভালো হলো ক্যাম্পাসেই কাজ খোঁজার চেষ্টা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, ক্যাফে বা অফিসের অভ্যর্থনা প্রায়ই বিভিন্ন কাজের সুযোগ দেয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh