বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ট্রেজারার নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে ট্রেজারার পদে যোগদানে বাধা সৃষ্টি করা হয়।
তাছাড়া ট্রেজারারকে যোগদানে বাধা প্রদানের ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় প্রক্টর রাহাত হোসাইন ফয়সাল পদত্যাগ করেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দেন তিনি। নীতি নৈতিকতা ধরে রাখতেই তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে তার পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেজারার কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান। তার আগেই তাকে যোগদানে বাধা সৃষ্টি করার জন্য ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। পরে উপাচার্যের কার্যালয়ে আসেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া ট্রেজারার। তখন শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কক্ষে ঢুকে ট্রেজারারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ এনে তাকে যোগদানে বাধা দেন এবং ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বলেন।
অধ্যাপক কলিমউল্লাহ বেরোবির সাবেক উপাচার্য থাকাকালীন রেজিস্ট্রার ছিলেন ববিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেজারার মোস্তফা কামাল। কলিমউল্লাহর স্বৈরাচারের দোসর ও তার সহযোগী হিসেবে মোস্তফা কামাল কাজ করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয় তার সামনেই। এসময় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেজারার এসব অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্ট নন বলে দাবি করেন।
পরে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আওয়ামী স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট বিরোধী স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাও ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারীর পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, নতুন ট্রেজারারের যোগদান ঠেকাতে ২৭ নভেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেই সাথে সকাল থেকে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারির একটি অংশ স্বৈরাচারীর পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি ও মানববন্ধন করে। প্রতিবাদলিপিতে স্বাক্ষর করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদেকুর রহমানসহ ২৩ জন শিক্ষক।
সহযোগী অধ্যাপক সাদেকুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন অধ্যাপককে আমরা ট্রেজারার হিসেবে চাই। ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারী দোসরকে আমরা দেখতে চাই না। জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে একজন সৎ, যোগ্য ও শিক্ষাবিদকে ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাই। আমরা জেনেছি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেজারারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ ছিল যখন তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ছিলেন এবং সাবেক উপাচার্য কলিমউল্লাহর ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা সেনাবাহিনী ট্রেজারার হিসাবে চাই না। আওয়ামী বা স্বৈরাচারীর মদদপুষ্ট কোনো ব্যক্তিকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দিতে পারি না। মোস্তফা কামাল বেরোবির সাবেক বিতর্কিত উপাচার্য কলিমউল্লাহর আস্থাভাজন ছিলেন। আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন স্বৈরাচারী বা দোসরমুক্ত অধ্যাপককে ট্রেজারার চাই।
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেজারার কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার সাথে খারাপ আচারণ না করে সরাসরি কথা বলুক। আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই। তারা যেসব অভিযোগ তুলেছে সেগুলো ভিত্তিহীন।
এদিকে ট্রেজারার যোগদানের আগেই ট্রেজারার কার্যালয়ে দুই কর্মকর্তা ও এক কর্মচারিকে দায়িত্ব বন্টনের অভিযোগ উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে। গত ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে সহকারী রেজিস্ট্রার ড. মোসা. সানজিদা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
অপরদিকে রেজিস্ট্রার থাকা অবস্থায় কেনো সহকারী রেজিস্ট্রার দিয়ে স্বাক্ষর করা হয়েছে, তা নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে ধোঁয়াশা। রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তাকে অবগত করা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষরকারী সানজিদা সুলতানা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন রাতে তাকে ডেকে নিয়ে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh