রাবির সাবেক প্রশাসন ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মামলা

এক যুগ আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের উপস্থিতিতে কর্মরত এক সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার (২ ডিসেম্বর) ভুক্তভোগী সাংবাদিকের ছোট ভাই বাদী হয়ে রাজশাহী জজ কোর্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন ও ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যা চেষ্টায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ভুক্তভোগীর ছোট ভাই ও মামলার বাদী রোকনউজ্জামান।

ঘটনায় হামলার শিকার সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীর নাম সরদার হাসান ইলিয়াছ তানিম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। হামলার সময় তিনি রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক লাল গোলাপ ও পরবর্তীতে দৈনিক সংগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল কমিউনিটির সদস্য ছিলেন।

দায়েরকৃত মামলার মোকদ্দমা সূত্রে জানা যায়, মামলার আসামি ও সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনার অভিযুক্তরা হলো তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রক্টর (পরবর্তীতে উপ উপাচার্য) অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক তারেক নূর ও অধ্যাপক মুস্তাক আহমেদ, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের তৎকালীন রাবি শাখার সভাপতি ও সদ্য বিলুপ্ত হওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী (৪২), সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হোসাইন বিপু (৩৭), একই কমিটির সহ-সভাপতি ও বর্তমান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আল আরাফাত রাব্বি (৩৪), মাদার বখশ হল শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক ও বর্তমান তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রুহুল আমিন বাবু (৩৮)। এ ছাড়াও ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০৩-০৪ সেশনের ইন্জিনিয়ার আব্দুল আলিম (৩৫) ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৭-০৮ সেশনের কামাল হোসেন (৩৫)।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোকনউজ্জামান জানান, সাংবাদিক হাসান গত ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের স্টোর রুম থেকে ককটেল উদ্ধারের সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। এ সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বর্বরোচিত আক্রমণ করে। ছাত্রলীগ ক্যাডার রুহুল আমিন বাবু হকিস্টিক দিয়ে তাকে পিটিয়ে জখম করে। এ ছাড়াও তাকে ইট দিয়ে মাথা ও মুখে আঘাত করে হলের সামনে থাকা পানির কুয়ার মধ্যে ফেলে চুবিয়ে ধরে রাখে। তখন পানি থেকে উঠিয়ে আসামি আব্দুল আলীম, আল আরাফাত রাব্বি, আহম্মদ আলী মোল্লা এবং আবু হোসাইন বিপু রড ও জিআই পাইপ দিয়ে ভুক্তভোগীর পিঠে, কোমরে ও পায়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এমনকি আসামি কামাল হোসেন ও আহম্মদ আলী মোল্লা ভুক্তভোগীর পকেটে থাকা মুঠোফোন ও হাতে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।

তিনি আরো বলেন, এসময় ভুক্তভোগী নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য আকুতি মিনতি করেন। তবে, তারা প্রকার সাহায্য করার পরিবর্তে তার উপর হামলার নির্দেশ দেয়। তাদের মৌন সম্মতি পেয়ে দ্বিতীয়বার রড ও হকিস্টিক দিয়ে সাংবাদিক হাসানকে সর্ব শক্তি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তার সহকর্মী সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় মামলার বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের ছোট ভাই বলেন, ‘দীর্ঘদিন দেশে আইনের শাসন না থাকায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরিবারের পক্ষে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তাই আপনাদের মাধ্যমে আমি মহামান্য আদালতের কাছে আমার ভাইয়াকে হত্যা চেষ্টাকারী উক্ত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক তারেক নূর বলেন, ‘আমার দায়িত্বপালনকালে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। আমি আমার দায়িত্ব পালনে কোনো রাজনৈতিক দলকে এমন কোনো সম্মতি দেইনি।’

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মুস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আগস্টের ৫ তারিখের পরে তো সব রিস্টার্ট হয়ে গেছে। এর পরে কত বিষয় ‘কেচো খুড়ে’ বের করা হচ্ছে। ১৩ বছর আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে নেই। আর যে সাংবাদিককে মারার অভিযোগ উঠেছে তাকে আমি চিনি না ও জানি না। বরং, আমরা আরো সাংবাদিকরা কিভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট ছিলাম।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ‘মামলার কাগজপত্র এখনো থানায় আসেনি। তবে, কাগজপত্র হাতে পেলেই কাজ শুরু করা হবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh