ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ৯ সংস্কার প্রস্তাব শিবিরের

জানুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। কোনও কারণে নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিরিক্ত সময় চাইলে, সে জন্য যৌক্তিক কারণ দর্শাতে হবে বলেও জানায় তারা। 

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ এসব কথা বলেন। এ সময় তারা ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৯টি সংস্কার প্রস্তাব দেয়।

ফরহাদ বলেন, ‘আমরা যে সংস্কার প্রস্তাব করছি। এর মধ্যে সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে যৌক্তিক সংস্কারগুলো নিশ্চিত করে জানুয়ারির মধ্যে ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চায়। আমরাও চাই। তবে নির্বাচন আয়োজন করতে প্রশাসন যদি অতিরিক্ত সময় চায়, যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে।’


৯ প্রস্তাবনায় যা আছে–

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপাচার্য পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি মনোনীত হন। তার তত্ত্বাবধানে সব সভা, নির্বাহী কমিটি, অন্যান্য কমিটি ও উপকমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সংসদ পরিচালনা, জরুরি অবস্থা, অচলাবস্থা বা নিয়ম ভঙ্গের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। যেকোনও সময় যেকোনও কমিটির সদস্যকে বহিষ্কার বা সম্পূর্ণ কমিটি বাতিল বা নতুন নির্বাচন আহ্বানসহ একাধিক ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রশিবির বলছে, অনির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও সভাপতিকে যে অসীম সেচ্চাচারী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা যেকোনও অর্থেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। সভাপতির এসব ক্ষমতা হ্রাস করার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রশিবির। প্রস্তাবনায় তারা সভাপতি পদটিকে একটি আলঙ্করিক পদ করার প্রস্তাব করেছে, যেখানে সভাপতির কোনও ধরনের নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২০১৯ সালের সংশোধিত সম্পাদকীয় পদ অনুযায়ী ডাকসুতে ১৪টি পদ রয়েছে। এরমধ্যে কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদকে আলাদা করে পাঠাগার, পাঠকক্ষ ও কমনরুম বিষয়ক সম্পাদক এবং ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিন বিষয়ক সম্পাদক পদ তৈরির প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। এছাড়াও সাহিত্য সম্পাদক ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদকে একীভূত করে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

নারী ও সমতা বিষয়ক সম্পাদক, ধর্ম ও সম্প্রীতি বিষয়ক সম্পাদক নামে নতুন পদ তৈরির প্রস্তাব করেছে ছাত্রশিবির। নতুন দুই পদ প্রস্তাবের বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমাদের সবগুলো হলের মধ্যে ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা আছেন, তাদের মধ্যকার আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি এবং ধর্মের সত্যিকারের অধিকার ঠিকঠাক সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা, তা দেখতে এই পদ তৈরির আহ্বান করেছি।’

মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদ পরিবর্তন করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদ চালুর প্রস্তাব করেছে ছাত্রশিবির।

এই প্রস্তাবনার মূল্যায়নে তারা বলছে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদি বয়ানের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের সংশোধনীতে বিধি ৫ এর ঙ ধারাতে শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন ও আদর্শ প্রচার ও বাস্তবায়নের এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ বাঙালি জাতীয়তাবাদের উল্লেখ রেখে পদটি সংযোজন করা হয়।

নতুন পদটিতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে দেশের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশি জাতীয়বাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

এছাড়াও ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। আগে ডাকসুর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী নির্বাচন না হওয়ার পর্যন্ত ৯০ কমিটির মেয়াদ থাকতো।

ছাত্রশিবির প্রস্তাব করছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। এছাড়াও ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের ক্ষমতা সিন্ডিকেট থেকে ঘুরিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দেওয়া ও যেকোনও এজেন্ডা আলোচনার পর সভাপতির অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রশিবির।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh