Logo
×

Follow Us

নগর

সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল, বাড়ছে যাত্রীর চাপ

Icon

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ২২:২৪

সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল, বাড়ছে যাত্রীর চাপ

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। ছবি: জবি প্রতিনিধি

আসন্ন ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটির শুরুর দিন রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী সংকটে ভোগা দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলোতে অবশেষে যাত্রীচাপ বাড়ছে। হাজার হাজার যাত্রীবোঝাই করে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে গেছে। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকটা স্বস্তি নিয়েই ঘরমুখো মানুষেরা গ্রামে যাচ্ছেন। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণের জেলাগুলো মানুষের পৌঁছে দিতে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে।

ঈদের ছুটির প্রথম দিনে নিয়মিতভাবে চলাচলকারী লঞ্চগুলো পাশাপাশি স্পেশাল ট্রিপ দেয়া লঞ্চগুলোও পূর্ণ যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দ্যেশ্যে ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। কিছু দিন আগেও যেখানে যাত্রীর অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ ছাড়তো না সেখানে এখন লঞ্চগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়ছে। খালি নেই লঞ্চগুলোর কেবিন, ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। এছাড়া বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী যাত্রীদের অনেকেই ঈদের আগের দিনের কেবিন বুকিং দিতে এসেছেন। আবার লঞ্চের ডেকে জায়গা করে নিতেও অনেকে আগেভাগে ঘাটে চলে এসেছেন।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এদিন বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামার মুহূর্তে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকতে থাকে। যাত্রীদের বেশিরভাগই বরিশালগামী লঞ্চে ভীড় করছেন। এছাড়াও পটুয়াখালী বগা ইলিশা এসব রুটেও যাত্রী আসতে শুরু করেছে। এদিকে যাত্রী চাপ আর লঞ্চে ভীড় যেনো সময় গড়ানোর সাথে সাথে বেড়েই চলছে।

সদরঘাটের একাধিক লঞ্চের সুপারভাইজার আর টিকিট কাউন্টার থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রী সংখ্যাই বেশি৷ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোই লঞ্চে যাচ্ছে। সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই যাত্রী চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে টিকিট বিক্রির চাপে লঞ্চ সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলারই সময় পাচ্ছেন না।

ভোলাগামী যাত্রী সোহাগ রাসিফ বলেন, আমি লঞ্চের নিয়মিত যাত্রী। ঈদ উপলক্ষে অফিস ছুটি হওয়ায় বাড়ি যাচ্ছি। পরিচিত হওয়ায় কেবিন বুকিং করতে কোনো সমস্যা হয়নি। আশা করছি স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পারবো।

এমডি পূবালী-১ লঞ্চে করে রাজধানীর বসিলার বাসিন্দা সোহেল রানা বরগুনায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে। তিনি বলেন, ঘাটে ভিড় এবং যাত্রী বেশি থাকলেও সময় মতো লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। আর ভিড় ঠেলে লঞ্চে উঠতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আহমেদ ঈদ করতে পরিবার নিয়ে পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তিনি জানান, এম ভি এ আর খান লঞ্চের টিকিট পেয়েছি। তবে ঘাটে অনেক লোকের ভীড়। লঞ্চে ঠিকভাবে উঠতে পারলেই হয়। একা হলে সমস্যা ছিল না, পরিবার নিয়ে এতো ভিড়ের মধ্যে লঞ্চে উঠতে অনেক কষ্ট।

অন্যদিকে যাত্রী বেশি হওয়ায় অনেকেই আবার লঞ্চে উঠতে পারেনি। তাই পরবর্তী লঞ্চের জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। পরিবার নিয়ে এই অপেক্ষাটা অনেকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভোলার চরফ্যাশন অভিমুখী এমভি কর্ণফুলী-১১ লঞ্চের যাত্রী ছিলেন আফজাল হোসেন। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে লঞ্চে উঠতে পারেননি। তিনি জানান, প্রচুর যাত্রী চাপ ঘাটে। লঞ্চের টিকিট কেটেও উঠতে পারলাম না। এতো মানুষের ভিড় কোনোভাবেই লঞ্চে উঠতে পারিনি। এখন পরবর্তী লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছি।

বরিশালরুটে স্পেশাল সার্ভিস দেয়া লঞ্চ মানামীতেও দেখা যায় যাত্রীদের ভীড়। এ লঞ্চের সুপারভাইজার মামুন মিয়া জানান, ঈদের ছুটিতে আজই আমাদের প্রথম যাত্রা। সরকারি অফিস ছুটি হওয়ায় যাত্রী চাপ বেড়েছে। প্রায় সবকয়টি কেবিনও বুকিং হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চ ছেড়ে যাবে মনে হচ্ছে।

অ্যাডভেঞ্চার-৫ লঞ্চের চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এবারের ঈদে আজকেই সবচেয়ে বেশি যাত্রী হয়েছে। তবে গত ঈদের মতো যাত্রী এখনও দেখছি না। আশা করছি ভালোভাবে বরিশাল পৌঁছাতে পারবো।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, বরিশাল রুটে এতোদিন ২টি করে লঞ্চ চলতো, আজ চলবে ৮টি লঞ্চ। পটুয়াখালী রুটে চলাচল করতো একটি লঞ্চ, এ রুটেও আজ চলবে ৮টি লঞ্চ। ভোলা, ইলিশা রুটে যাত্রী আসছে। সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের বড় লঞ্চগুলোর ধারণক্ষমতা ১২০০ তবে সেখানে ৩০০০ হলেও সমস্যা হবে না৷ যাত্রী চাপ সামলাতে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে লঞ্চও প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঈদ যাত্রায় এবার কোনো ভাড়া বাড়ানো হবে না। আর যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ লঞ্চ চলবে। এসব লঞ্চের কেবিন বুকিং ও ডেকের টিকিট ঘাটে এসেই নিতে পারবেন।

সার্বিক বিষয়ে নৌপুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের ঈদযাত্রা সুন্দর ও সহজ করতে আমরা সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা সর্বদা যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকব। ঈদের সময়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা মাথায় নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। যাত্রীরা যেন এবারের ঈদ যাত্রা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে পারেন সেই প্রত্যাশায় নৌ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫