
বুশরা আফরিন। ফাইল ছবি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে চিফ হিট অফিসার হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে বুশরা আফরিনকে। গত বুধবারই (৩ মে) তাকে এই পদে নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তো বটেই, এশিয়ার কোন শহরের প্রথম চিফ হিট অফিসার হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে তাকে। বুশরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের কন্যা।
কানাডায় গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে পড়াশোনা করেছেন বুশরা। যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি, লস অ্যাঞ্জেলেস, চিলির সান্টিয়াগো, সিয়েরা লিওনের সান্টিয়াগো, গ্রিসের এথেন্স, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে চিফ হিট অফিসার রয়েছে। এবার ঢাকায় ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
কীভাবে কাজ করবেন বুশরা?
তাপমাত্রা বাড়ছে ঢাকা শহরে। চলতি বছরেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। গত ৫৮ বছরে এটাই ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। কীভাবে এই তাপমাত্রার মোকাবিলা করা যায় তা নিয়েই কাজ করবেন বুশরা। বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার।
বুশরা জানিয়েছেন, চিফ হিট অফিসার হিসাবে তিনি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবেন। তার মতে, সচেতনতা প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। কীভাবে গরমের মধ্যে শিশু, গর্ভবতী, বয়স্করা সুস্থ থাকতে পারেন তা সাধারণ মানুষ জানেন না।
চিফ হিট অফিসার কেমন পদ?
ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের (আর্শট-রক) সঙ্গে চুক্তি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ওই চুক্তির আওতায় দুবছরে ঢাকায় ২ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা এবং শহরে ‘হিট আইল্যান্ডে’র প্রভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন করেন চিফ হিট অফিসার।
বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে এইকাজ করার এবং সমন্বয় করার দায়িত্ব তার। চিফ হিট অফিসারের আওতায় যেসব কাজ হবে, সেগুলোর অর্থ দেবে আর্শট-রক। এছাড়া তার বেতনসহ সব খরচ তারাই দেবে।
কী কাজ করবেন বুশরা?বুশরা আফরিন সমাজের সর্বস্তরের সাথে এবং বিশেষত তাপদাহে চরম ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ঢাকায় চরম তাপমাত্রা প্রশমনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করার পাশাপাশি- সেগুলোর সমাধান খুঁজবেন। তার প্রধান দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে, চরম তাপমাত্রার উচ্চ ঝুঁকি সম্পর্কে জন-সচেতনতা সৃষ্টি; ঝুঁকিগ্রস্ত সম্প্রদায় ও এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করা; অংশীজনের সাথে কার্যক্রমের সমন্বয় স্থাপন; উচ্চ তাপের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি হ্রাস এবং নগরকে শীতল রাখার প্রকল্প বাস্তবায়ন।
বুশরা বলেন, চরম তাপপ্রবাহের অদৃশ্য ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশই এবিষয়ে নাগরিকদের আগাম সতর্ক করে। তাপপ্রবাহের সময় বাইরে বের হলে কী করতে হবে- সে সম্পর্কে পরামর্শ দেয়। কিন্তু, বাংলাদেশে সে ব্যবস্থা নেই। চরম তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এজন্য তাদের নীতি-প্রণয়নে সম্পৃক্ত করা দরকার- যোগ করেন তিনি।
বুশরা বলেন, তাপপ্রবাহে দুর্ভোগে থাকা সাধারণ মানুষের মতামত নীতি প্রণয়নের সময় শোনা হয় না। তাদের কথা, বিশেষত নারীরা যারা সবচেয়ে বেশি বেশি দুর্ভোগ পোহান তাদের কথাও শুনতে হবে।
তিনি জানান, বিশ্বের অন্যান্য শহরে নিয়োজিত চিফ হিট অফিসাররা ভবন, ফুটপাথ, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে তারা গাছ লাগানোর মতো বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেন।
ঢাকায় জায়গার খুব স্বল্পতা থাকায় এখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কীভাবে খুদে বন গড়ে তোলা যায় আমাদের তার উপায় সন্ধান করতে হবে। চরম হিটস্টোক এড়ানোর অনেক উপায় আছে। সঠিক উপায় খুঁজে বের করে, স্থানীয় বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কী করা দরকার এবং কীভাবে তা করা যায়– সেজন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
ঢাকায় তীব্র তাপপ্রবাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসির) সঙ্গে অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের (আর্শট-রকফেলার) মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এর আওতায় ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে ডিএনসিসি ও আর্শট-রকফেলার যৌথভাবে কাজ করবে।
এই উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বুধবার (৩ মে) এক অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে তাপমাত্রা কমাতে আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন আমাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছে… আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা ঢাকা শহরে দুই লাখ গাছ লাগাব'।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বুশরাকে নিয়োগের সাথে ডিএনসিসির কোনোপ্রকার প্রাতিষ্ঠানিক বা আর্থিক সম্পৃক্ততা নেই। যথাযথভাবে যোগ্যতা যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কেবল ফাউন্ডেশনটি তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
তিনি আরো বলেন, এ নিয়োগটি সত্যিই আমাদের দেশের জন্য অনেক বেশি গর্বের এবং আনন্দের। বুশরা আফরিন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশবাসীকে গর্বিত করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।