Logo
×

Follow Us

নগর

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল দোহারে হওয়ায় কতটা আতঙ্কের

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩, ১৮:০৯

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল দোহারে হওয়ায় কতটা আতঙ্কের

বাংলাদেশে আট মাত্রা বা তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন ভূতত্ববিদরা। ছবি: বিবিসি

আজ শুক্রবার (৫ মে) সকালে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-এর হিসেব অনুযায়ী এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪.৩।

আমেরিকান সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।

এই ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, উৎপত্তিস্থল ঢাকা শহরের খুব কাছে এবং ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি। ভূতত্ববিদরা বলছেন, ভূমিকম্পটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে হওয়ায় এ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলছিলেন, ‘এর আগে যেসব ভূমিকম্প আমরা লক্ষ্য করেছি, সেগুলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩৫-৪০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হয়েছে। এই ভূমিকম্পটি সেগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেকটাই অগভীর।’

এই ভূমিকম্পের তথ্য নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে এটির সম্পর্কে আরো তথ্য জানানো যাবে বলে জানান তিনি।

ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর জানিয়ে শুক্রবার ভোরেই ঢাকার অনেক বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছেন। ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। কম্পনের তীব্রতায় অনেকের ঘুম ভেঙেছে।

ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের এলাকা বড় ধরণের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ভূতত্ববিদরা আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে আট মাত্রা বা তার চেয়ে বড় ধরণের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেরকম ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের অন্তত ছয় হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রাণহানি হবে অন্তত তিন লাখ মানুষের- এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

ভূতত্ববিদদরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ধরণের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে। তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পের মতো ঢাকার আশেপাশে উৎপত্তিস্থল রয়েছে, এমন ভূমিকম্পও মাঝেমধ্যেই হতে দেখা গেছে।

ভূতত্ববিদ হুমায়ুন আখতারও বলেন, ‘২০০৮ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে গ্রীষ্মের সময় অনেকগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে দেখেছি আমরা।’

ভূমিকম্প শনাক্তকারী সংস্থা আর্থকোয়েকট্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ এই অবস্থানেই- দোহার থেকে ১৪.২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে- ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল।

ঢাকার কাছে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও গত ২০ বছরের মধ্যে একাধিক ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। তিন বছর আগে, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের ১২ কিলোমিটার পূর্বে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এছাড়া ২০০৮ এ টাঙ্গাইলের কাছে নাগরপুরে এবং ২০১৯ সালে মির্জাপুরে চার মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হয়েছে বলে বলছে আর্থকোয়েকট্র্যাক।

পাশাপাশি গত ১৫ বছরে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে অন্তত চারবার ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। আর ঢাকার কাছে ফরিদপুরেও গত ১৫ বছরের মধ্যে দু’বার চার মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে বলে নথিবদ্ধ করেছে সংস্থাটি। তবে গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে ঢাকার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে নথিবদ্ধ করা হচ্ছে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে ৫.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্পকে।

বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে।-বিবিসি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫