বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৪ মৃত্যু
অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:১৬

ঝিলপাড় বস্তি এলাকায় বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ। ছবি- সংগৃহীত
টানা বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধ রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিন জনসহ চার জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুর কমার্স কলেজের পাশে ঝিলপাড় বস্তির বিপরীতে এই দুর্ঘটনার পর আলোচনায় এসেছে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের বিষয়টি।
স্থানীয়রা বলছেন, ড্রেন ও রাস্তার নিচের কালভার্ট দিয়ে ঝিলপাড় বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। অবৈধ এসব সংযোগের বিষয়ে আগেই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডকে (ডেসকো) মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলেন তারা। কিন্তু কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেননি কর্মকর্তারা। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এই দায় বিদ্যুৎ বিভাগ এড়াতে পারে না বলেও দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ডেসকো বলছে, যখনই কোথাও চোরাই লাইনের সন্ধান পাওয়া যায়, তখনই কর্মীরা গিয়ে তা বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে আসেন।
স্থানীদের অভিযোগ, চোরাই লাইনের বিষয়ে ডেসকোকে দুই বছর আগেই একবার মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন তারা। তবে এরপর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ চক্রের রোষানলে পড়তে হয় তাদের। ডেসকোর কর্মকর্তা, পুলিশ, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ করে’ এ ধরনের অবৈধ কাজ চালিয়ে আসছিল স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার এই দুর্ঘটনার পর ধামাচাপা দিতে ঘটনাটি নিয়ে মামলা না করতে এবং বাড়াবাড়ি না করে দফারফা করতে দুই পরিবারকে ১০ লাখ টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) যখন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চার জন পানিতে পড়েছিলেন, ঠিক তখনই বিষয়টি বুঝে পেরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের অন্যতম হোতা লাইলী রাস্তার পাশে এসে বিদ্যুৎ সংযোগ খুঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তা না হলে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যেতো।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ‘অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু’র কথা উল্লেখ করে মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত অনিকের বাবা। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে জানিয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনায় অবহেলা কার কার ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চার জনের মৃত্যুর ঘটনার পর শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ডেসকোর লোকজন এসে ড্রেনের নিচ দিয়ে থাকা বিদ্যুতের লাইন অপসারণ করে। স্থানীয়রা বলেন, এমন একটি ঘটনা ঘটার পর বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সজাগ হলো। চার জন মরার পরে তাদের বিবেকের উদয় হলো। দেখা যাক কত দিন এমনটা থাকে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী গণমাধ্যমকে বলেন, যখনই কোনও চোরাই লাইনের বিষয়ে আমরা জানতে পারি, তখনই তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে আসার পর অনেকেই আবার সেসব লাইনে সংযোগ দিয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিষয়ে কেউ তথ্য দিতে রাজি হয় না।