
পুরান ঢাকাকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানী ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হলো পুরান ঢাকা। কেননা এখানেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তির স্থাপনাসহ অসংখ্য ভবন, যা টিকে আছে শত শত বছর ধরে। তবে এলাকাটি যানজট, জলাবদ্ধতা, সরু সড়ক, জনঘনত্ব, অগ্নিকাণ্ড, আলো-বাতাসের স্বল্পতা, পানি ও গ্যাসের সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনজনিত সমস্যায় জর্জরিত জনপদে রূপ নিয়েছে।
এসব সমস্যা সমাধান করে পুরান ঢাকাকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কারণ বসবাসযোগ্যতা না থাকায় সেখানকার বহু বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, মিরপুর, বসুন্ধরা প্রভৃতি এলাকায় চলে যাচ্ছে। এতে পুরান ঢাকার নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকা মহানগরীর পশ্চিমে সরু বেড়িবাঁধে নির্মাণ করা হবে আট লেনের সুপরিসর সড়ক। মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার স্লুইসগেট থেকে পুরান ঢাকার লোহারপুল পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি হবে রাজধানীকে ঘিরে বৃত্তাকার সড়কের অংশ, যা ‘ইনার সার্কুলার রুট’ নামে পরিচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ২৫ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মনি সরণি নামের এ সড়ক দ্বিতীয় ধাপে লোহারপুল থেকে পোস্তগোলা সেতু পর্যন্ত যাবে।
এ ছাড়া পুরান ঢাকার সাতটি জায়গা চিহ্নিত করে সমীক্ষাকাজ শুরু হয়েছে। এলাকাগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজার, সোয়ারীঘাট, লালবাগ, ইসলামবাগ, কামরাঙ্গীরচর, বংশাল ও হাজারীবাগ। পাইলট প্রকল্পের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে হাজারীবাগ ও লালবাগ এলাকাকে। ‘আদি ঢাকা’র পুরো অংশই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাভুক্ত। পরবর্তী সময়ের নগরায়ণে পুরান ঢাকাসংলগ্ন ডিএসসিসির কিছু এলাকাও ঘিঞ্জি জনপদে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকা নতুন করে গড়ে তুলবে রাজউক। কামরাঙ্গীরচর এসব এলাকার প্রথম পর্বের তালিকায় রয়েছে।
বিশ্বের উন্নত অনেক দেশ ‘আরবান রিজেনারেশন বা নগর পুনঃউন্নয়ন’ পদ্ধতির মাধ্যমে পুরনো জরাজীর্ণ শহরকে নতুন রূপ দিয়েছে; শহরগুলো বাসযোগ্য হয়েছে। তাদের সফলতার অভিজ্ঞতাকে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিবেচনায় কাজে লাগাবে রাজউক। সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া নগর পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ সফল হয়েছে।
প্রকল্প পরিকল্পনায় রায়েরবাজার স্লুইসগেট-লোহারপুল পর্যন্ত আট লেনের সড়কের মাঝের চার লেন হবে এক্সপ্রেসওয়ে। ধীরগতির যানবাহন চলাচলে দুই পাশে থাকবে দুই লেনের সার্ভিস লেন। ফলে বিদ্যমান ২৪ ফুট প্রশস্ততার সড়কটি ১৪০ ফুটে উন্নীত হবে। সড়কের দুই পাশে ৫ ফুট প্রশস্তে ১০ কিলোমিটার ফুটপাত ও ১০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এতে নতুন হবে পুরান ঢাকা। গাবতলী থেকে ঢাকায় প্রবেশ না করে এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে যেতে পারবে যানবাহন। যাওয়া যাবে নারায়ণঞ্জেও। এতে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।
পুরান ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত অনেক ভবনেরই বয়স ১০০ বছরের বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগই সময়োপযোগী নয়। এ ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক সংকীর্ণ। পুরান ঢাকার চলমান এসব নাগরিক সমস্যার সমাধান করে শিগগিরই নতুন শহরের আদলে সাজানো হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে।