Logo
×

Follow Us

নগর

লাখের নিচে কোনো গরু নেই!

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ১৩:৪৬

লাখের নিচে কোনো গরু নেই!

এ বছর রাজধানীর হাটে লাখ টাকার নীচে মিলছে না গরু। ফাইল ছবি

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘হাতি মরলেও লাখ টাকা, বাঁচলেও লাখ টাকা’। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় (মুদ্রাস্ফীতি) এখন আর এই প্রবাদের তেমন কোনো মূল্য নেই। কারণ মূল্যস্ফীতির বাজারে লাখ টাকার হাতি এখন কয়েক কোটিতেও মিলবে কিনা সন্দেহ। লাখ টাকায় এখন মরা হাতি না পাওয়া গেলেও রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বাহারি সাইজের গরু। তবে এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্তরা। তাদের বাজেটে মিলছে না জিরজিরে গরুও।  

রাজধানীর বিভিন্ন হাটের ইজারাদার-বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু বাজারে এলেও দাম চড়া। লাখ টাকার নিচে তেমন ভালো গরু নেই বাজারে। সেসব গরু যে খুব বড়, তাও নয়। কোরবানির পশু এসেছে বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। বাজারে ক্রেতা সমাগম থাকলেও এখনো বেচাকেনা শুরু হয়নি সেভাবে। ক্রেতারা বাজার ঘুরে দেখছেন, গরু পছন্দ করছেন, সার্বিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছেন, কিনছেন।

খামারি ও বিক্রেতারা বলছেন, সারা বছর গরুর পেছনে খামারিদের যে খরচ, কষ্ট, যত্ন এসব সম্পর্কে ক্রেতাদের তেমন ধারণা নেই। তাই, না বুঝে তারা গরুর দাম বলছেন। এখনও ক্রেতারা আসলে বাজার যাচাই করছেন। অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন, অনেক বেশি দাম চাচ্ছেন খামারি ও ব্যাপারীরা।

গাবতলী হাটে ধানমন্ডির রাসেল আহমেদ কালো রঙের মাঝারি আকারের একটি গরু কিনেছেন এক লাখ সাত হাজার টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, ব্যাপারী-খামারিরা এখনো গরু ছাড়তে চাচ্ছেন না, দাম অনেক বলছে। সকাল ৯টায় এসেছি, দুই ঘণ্টা ঘুরে গরু কিনেছি। ঈদের আগে দাম কমবে। তারপরও ঝামেলা এবং ভিড় এড়াতে আজ কিনলাম।

রাসেল আহমেদের কেনা গরুর খামারি উল্লাপাড়ার রিমন হোসেন এক লাখ সাত হাজার টাকায় গরু বিক্রি করে খুশি নন। তার দাবি, গাবতলী হাটে এনে তিনি তার কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি। এর থেকে এলাকার হাটে বিক্রি করলে আরও ভালো দাম পেতেন বলে মনে করেন তিনি।

একই হাটের আরেক খামারি পাবনার সুজন হালদার বলেন, সারা বছর ধরে নিজের বাড়িতে পালন করা ১০টি গরু নিয়ে এসেছি। গতকাল একটা এবং আজ আরেকটা গরু বিক্রি করলাম মোট দুই লাখ ২০ হাজার টাকায়। এখানে গরু নিয়ে এসে যে ভুল করেছি তা বলার নয়। অযথা গাড়ি ভাড়া দেওয়া লাগল। ভবিষ্যতে ঢাকার হাটে আর গরু নিয়ে আসব না। এত দূরে কষ্ট করে, খরচ করে এনে কোনো লাভ নেই। বরং ঈদের আগে লস করে বাড়ি ফিরতে হয়।

বাড়িতে পালন করা ১৫টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন কুষ্টিয়ার ব্যাপারী মিজান মোল্লা। একটু বড় আকারের এসব গরু নিয়ে গাবতলী হাটে আসেন তিনি। গরুগুলোর বয়স চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বলে জানান তিনি। এসব গরুর মধ্যে একটা গরুর প্রায় ১৬-১৭ মণ মাংস হবে বলে জানান এই ব্যাপারী। এই গরুটি ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল থেকে যত গরু বিক্রি হয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল মাঝারি সাইজের। তবে ছোট গরুর দাম এ হাটে ছিল চড়া। তারপরও গতবারের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কম। এ হাটে প্রতিটি হাসিল ঘর থেকে শুক্রবার যতো হাসিল টোকেন কাটা হয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু ক্রেতার। বড় গরু খুবই কম বিক্রি হয়েছে। এ হাটে মাঝারি গরুগুলো এক লাখ ১০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

এদিকে এবার কোটি টাকাতেও বিক্রি হয়েছে গরু। ৬০ লাখ টাকায় আরও একটি গরু বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর সাদিক এগ্রো থেকে তিনটি গরু দুই কোটি ৬০ লাখ টাকায় কিনেছেন ঢাকার এক ক্রেতা। মাস দুয়েক আগে রাজধানীতে প্রাণিসম্পদ মেলায় কোটি টাকার একটি গরু এনে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল সাদিক এগ্রো। ফেসবুক আর ইউটিউবে ‘বংশ মর্যাদাপূর্ণ’ কোটি টাকার সেই গরু নিয়ে আলোচনার রেশ এখনও কাটেনি। এরইমধ্যে সাদিক এগ্রো কোরবানির বাজারে এক কোটি টাকার আরও একটি গরু তুললেও তা প্রচারে ছিল না। গত সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাহামা জাতের তিনটি গরুই বিক্রি হয়ে গেছে। এক কোটি টাকায় বিক্রি হওয়া বিশেষ গরুটি এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে দামি গরু। এরমধ্যে দিয়ে কোরবানির বাজারের ইতিহাসে তৈরি হলো নতুন মাইলফলক।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল ১৮০ কেজি ওজনের একটি ছাগলের ভিডিও। সাদিক এগ্রোর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খামারে থাকা পশুটি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার খাসিটির দাম হাঁকা হয় ১৫ লাখ টাকা। আলোচনার তুঙ্গে থাকায় একে দেখতে খামারে তৈরি হয় উপচেপড়া ভিড়। খাসিটি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার এক ক্রেতা ১৫ লাখ টাকাতেই কিনে নিয়েছেন ধূসর বাদামি রঙের পশুটি। এটিই বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় খাসি বলে প্রতিষ্ঠানটির দাবি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫