Logo
×

Follow Us

নগর

শাহবাগ ও সাইন্সল্যাবে ‘বাংলা ব্লকেড’, যানচলাচল বন্ধ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩

শাহবাগ ও সাইন্সল্যাবে ‘বাংলা ব্লকেড’, যানচলাচল বন্ধ

কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ ও সাইন্সল্যাব মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে ওই এলাকার আশেপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।  

জানা গেছে, আজ বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আন্দোলনকারীরা এই দুই জায়গায় অবস্থান নেয়। তারপর ১১টা ১৫ মিনিট থেকে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তারা। হরের বিভিন্ন দিক থেকে এই মোড়ে আসা গাড়িগুলো উল্টোদিকে ঘুরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। 

শাহবাগ মোড়ে সরেজমিন দেখা যায়, আন্দোলনকারীদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল দশটার আগে থেকেই রাস্তা গণপরিবহন চলাচল কমে যায়। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি সংখ্যাও রয়েছে খুবই কম। তবে মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছেন।

এদিকে আজ বুধবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবরোধ করেন। এর ফলে এই এলাকার সবগুলো প্রধান ও শাখা সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। তৈরি হয়েছে যানজট।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘দফা এক দাবি এত, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সবার জন্য সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’ সহ বিভিন্ন কোটা বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আজ আদালতের রায়ে যদি কোটা বহাল রাখা হয় তাহলে আমাদের আন্দোলন চলবে। আর যদি কোটা রাখতেই হয় তাহলে ৫ শতাংশের বেশি নয়। আমরা মনে করি, কোটা ব্যবস্থা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। একজন শিক্ষার্থী বেশি নাম্বার পেয়েও নিয়োগ পাবে না, আর আরেকজন কম নাম্বার পেয়েও কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে যাবে এটি হতে পারে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে মেধার ভিত্তিতে হোক, যাতে যোগ্যতম প্রার্থীরাই চাকরি পায়। হাইকোর্টের যে রায় হয়েছে সেটি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকতেও কোটা পদ্ধতি স্থায়ীভাবে বহাল হতে দেওয়া হবে না।

কোটা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় না এলে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, অন্যায় এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আজ সড়কে অবস্থান করবেন। আমরা কোটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কোটার মাধ্যমে বৈষম্য করা হচ্ছে।

এর আগে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ অনুযায়ী আগামীকাল (বুধবার) সারাদিন দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবরোধ করা হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশাপাশি হাইওয়ে এবং রেলপথও এই ব্লকেডের আওতায় থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। এই আন্দোলনের ফলে জনসাধারণের যে ভোগান্তি হচ্ছে তার প্রতি আমরা সংবেদনশীল। কিন্তু এর দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে। কারণ এতদিনের আন্দোলনের পরেও তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি এবং বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেনি। আমরা চূড়ান্ত সমাধান চাই। আমরা চাই, অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম ৫ শতাংশে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। যেন পরবর্তীতে এটি আবার সমস্যা হিসেবে সামনে না আসে।

কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল (বুধবার) থেকে আমরা সকাল-সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছি। বুধবার সকাল ১০টায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ করব। এছাড়া সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও এই অবরোধ পরিচালিত হবে। তাছাড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে এবং রেলপথও এই ব্লকেডের অন্তর্ভুক্ত হবে। আমাদের সব সমন্বয়কদের সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সফল করার জন্য বলা হলো।

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ১০ দিন ধরে আমাদের দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন করে এসেছি। আমাদের দাবিটি দেশের সব শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি ও অত্যন্ত যৌক্তিক হওয়ায় তা সবার মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। যদি সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে কমিশন গঠনের মাধ্যমে আমাদের দাবি মেনে নেয়, সেক্ষেত্রেই আমরা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসরুমে ফিরে যাব। অন্যথায় আমাদের দাবি আদায়ে আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না।

এর আগে গত ৭ জুলাই ঘোষিত শিক্ষার্থীদের বর্তমান এক দফা দাবি হলো– সব গ্রেডে সব প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫