পানির নিচে বংশালের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি। ছবি: সুজিত সজীব
ছুটির সকালে ঝুম বৃষ্টি দেখল রাজধানীবাসী। আর এই তুমুল বৃষ্টিতে বাড়ল ভোগান্তিও। বৃষ্টিতে রাজধানীর নানা সড়কে জমে গেছে পানি। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরসমান পানি। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হওয়া নগরবাসী ও শ্রমজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পরেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ছয়টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৬০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের সব জায়গায়ই হয়েছে। আর এমনটা চলতে পারে প্রায় সারাদিন। তবে আগামীকাল শনিবার (১৩ জুলাই) থেকে বৃষ্টি একটু কমে আসবে।
ঢাকার ধানমন্ডি, বংশাল, কারওয়ান বাজার, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কল্যাণপুর, শাহজাহানপুর, মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মগবাজার, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনিপাড়াসহ পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বর্ডার বাজার, দক্ষিণ মনিপুরের মোল্লাপাড়াসহ অনেক রাস্তায় পানি জমে গেছে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে রাপা প্লাজার সামনের রাস্তায় প্রচুর পানি জমেছে। এই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ আছে।
বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ঢাকার কল্যাণপুরের প্রধান সড়ক। বেলা পৌনে ১১টায় দেখা যায়, কল্যাণপুর নতুন বাজার মোড় থেকে কল্যাণপুর গার্লস স্কুল পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক পুরো পানির নিচে ডুবে আছে। রিকশার পাদানিতে পানি উঠে যাচ্ছে। পথচলতি মানুষের হাঁটু ডুবে যাচ্ছে। রিকশাচালক বেলাল হোসেন বলেন, আর কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলে এই রাস্তায় রিকশা চালানোরও উপায় থাকবে না। পানির মধ্যে রিকশা সামনে আগাতে চায় না, অনেক দম লাগে। এই পানি পার হওয়ার জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০ টাকা করে নিচ্ছেন তিনি৷
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজ সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীতে সকাল থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে এটি আজ সকালে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। তবে সব তথ্য এখনো এসে পৌঁছায়নি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে খুলনায়, ৫৫ মিলিমিটার।
চলতি মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়। ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণে এবং সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা দেখা দিতে শুরু করে। বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে।
গত ২৪ ঘণ্টায়, অর্থাৎ গতকাল সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে, ৩০৯ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে, ২১৯ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হলেও রাতে পর থেকেই বৃষ্টির ধারা কমে আসবে। আগামীকাল থেকে বৃষ্টি আরও খানিকটা কমে যেতে পারে। তবে আজ বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা কমে আসবে।
উল্লেখ্য, দেশে মৌসুমি এই বায়ুর প্রভাব যথেষ্ট রয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণেই আসলে এখনকার বৃষ্টিপাত। এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের এক দিন আগে, অর্থাৎ ৩০ মে মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করে। এরপর বৃষ্টি শুরু হলেও গত জুন মাসে যেমন বৃষ্টি হয়েছে, তেমনি আবার গরম পড়েছিল খুব। জুন মাসে সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগ বাদ দিয়ে সব বিভাগেই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের এই মাসের পূর্বাভাসে বলেছে, এই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হবে। বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।