
বিমানের ফ্লাইট নাম্বার -বিজি ৪৩৬ উড়োজাহাজটির চাকা উড্ডয়নের পরেই খুলে পড়ে যায়
দুপুর ১টা ১৭ মিনিট। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ড্যাশ-৮ ৪০০ উড়োজাহাজটি ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে।
উড়োজাহাজটিতে ছিলেন ৭১ জন যাত্রী। পৌনে এক ঘণ্টা পর সবার ঢাকার ফেরার কথা। সৈকত শহর কক্সবাজার ঘুরে সবাই আনন্দে।
কিন্তু বিমানের (ফ্লাইট নাম্বার -বিজি ৪৩৬) উড়োজাহাজটি ছেড়ে যাওয়ার পরপরই চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটটি কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে টেকঅফের সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের বামপাশের চাকা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খুলে যায়। এরকম অবস্থায় কাজে লাগাতে হয় উড়োজাহাজ চালনার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা।
তবে চাকা খুলে যাওয়ার পরেও কিন্তু বৈমানিক তা জানতে পারেননি। কারণ, উড়োজাহাজের পেছনের বাম পাশের দুটি চাকার একটি খুলে গেলেও যায়। তা সেন্সরে ধরা পড়েনি। পরে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকেই ক্যাপ্টেনকে চাকা খুলে যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
ঢাকায় এসে লো-ফ্লাই করার পর কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেনকে নিশ্চিত করা হয় যে তার উড়োজাহাজের বাম পাশের একটি চাকা খুলে গিয়েছে।
বিষয়টি তখনও কোনো যাত্রী জানেন না। এদিকে ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ ও ফার্স্ট অফিসার জায়েদ আকাশে বসেই তাদের অবস্থা ঢাকার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অবহিত করেন। দুই বৈমানিকের সঙ্গে ছিলেন দুজন কেবিন ক্রু এবং ৭১ জন যাত্রী। সেই অনুযায়ী বিমানবন্দর কতৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, চিকিৎসার প্রস্তুতি, বিমানের কর্মীরা সব ধরনের প্রস্তুতি নেয় যাত্রীদের জরুরি উদ্ধারে।
যেহেতু বাম পাশের একটি চাকা খুলে গিয়েছে, তাই ক্যাপ্টেন ডানপাশে কিছুটা প্রেশার দিয়ে উড়োজাহাজ অবতরণ করান। নিয়ম অনুযায়ী এটিই করার কথা। টেক অফ করার চাকা ল্যান্ডিং গিয়ার ডোরে ঢুকে যায়।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (পিআর) রওশন কবীর বলেন, “ফ্লাইটের পাইলট-ইন-কমান্ড ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ ও তার ক্রুদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতায় ফ্লাইট দুপুর ২:২০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করেন।”
নাম না প্রকাশের শর্তে বিমানের একজন ক্যাপ্টেন বলেন, “এ ধরনের ক্রিটিকাল মুহুর্তে একজন বৈমানিককে অনেক বড় মানসিক চাপ নিয়ে ফ্লাই করতে হয়। দুজন বৈমানিক থাকলেও এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাপ্টেনই উড়োজাহাজ অবতরণ করান।”
তিনি বলেন, “ক্যাপ্টেন বিল্লাহ বোয়িং ৭৩৭, ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের ফার্স্ট অফিসার হিসেবেও দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন।”
ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহর রয়েছে আট হাজার ঘণ্টা ফ্লাইং করার অভিজ্ঞতা।
অবতরণের পরে ফ্লাইটের যাত্রীরা বৈমানিক এবং কেবিন ক্রুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ইমারজেন্সি ল্যান্ডিং এর ব্যবস্থাপনার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
নেক্সট এয়ার একাডেমির চিফ ফ্লাইট ইন্সট্রাকটর (সিএফআই) ক্যাপ্টেন রাজীব উদ্দিন বলেন, “বৈমানিকেরা অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। যদিও আমাদের ট্রেনিংয়ের সময় এ ধরনের মুহূর্তে কখন কী করতে হবে তা শেখানো হয়। তবে যখন কেউ সত্যিকার বিপদে পড়েন তখন সব ম্যানুয়াল অনুসরণ করে কাজ করতে পারাই ট্রেনিংয়ের সার্থকতা।”
“বৈমানিকদের পেশাদারিত্ব এবং বিচক্ষণতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে”, যোগ করেন তিনি।