সার্জেন্ট মহুয়াকে হয়রানি ‘ক্ষমতার চরম অপব্যবহার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২৬
বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন মানববন্ধনের আয়োজন করে। ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীতে গাড়ির ধাক্কায় বাবা আহত হওয়ার মামলা করতে গিয়ে পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের হয়রানির ঘটনাকে ‘ক্ষমতার চরম অপব্যবহার’ আখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
গতকাল সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মহুয়ার বাবা মনোরঞ্জন হাজংয়ের ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, ক্ষমতার চাপে দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা ছিল পুলিশ কর্মকর্তাদের। মহুয়া হাজং পুলিশের একজন সার্জেন্ট হওয়ার পরেও বাবার দুর্ঘটনায় মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাকে নানাভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বলেন, একজন পুলিশ সার্জেন্ট হয়েও বাবার দুর্ঘটনায় মামলা করতে পারছিলেন না মহুয়া। তাহলে ক্ষমতার কাছে সাধারণ মানুষ কতটা অসহায়?
মনোরঞ্জনের দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন অলিক।
এসময় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, মনোরঞ্জন হাজংয়ের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি একজন বিচারপতির ছেলে। তিনি যদি ন্যায়বিচার কায়েম করতে পারতেন, যদি ন্যায়বিচারক হতেন, তার উচিত ছিল সন্তানকে পুলিশে সোপর্দ করা। তিনি সেটা করেননি, উল্টো মহুয়া হাজংকে নানাভাবে প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
মানববন্ধনে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরেন হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিলের ঢাকা মহানগরের ক্রীড়া সম্পাদক নাঈম হাজং।
অন্য দাবিগুলো হলো- সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও মামলা না নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের গাফিলতির জবাবদিহি ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; আহত মনোরঞ্জন হাজংয়ের সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া; সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের চাকরি নিয়ে যেন শঙ্কা না থাকে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা; মহুয়া হাজংয়ের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং সবার জন্য আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল হাজংয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত ধামাই, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের ঢাকা মহানগরের সভাপতি ডন যেত্রা প্রমুখ।
গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যান বাড়ি ইউটার্নে দ্রুতগতির ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন পুলিশের সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা মনোরঞ্জন হাজং। দুর্ঘটনার পর অস্ত্রোপচার করে তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। এখন রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন বিজিবির সাবেক এই হাবিলদার।
ঘটনার পর মামলা করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে কর্মরত এই নারী কর্মকর্তা। কিন্তু বিচারপতির ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হওয়ায় মামলা নেয়নি পুলিশ।
উল্টো মনোরঞ্জন হাজংয়ের বিরুদ্ধে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তাকে ধাক্কা দেওয়া গাড়িচালক। দুর্ঘটনার জন্য মনোরঞ্জন হাজংকেই দায়ী করেছেন সাঈদ হাসান নামের ওই ব্যক্তি। এ দুর্ঘটনায় পা হারানো মনোরঞ্জন হাজংকে আসামি করে মামলা দেওয়া উচিত বলেও জিডিতে লিখেছেন তিনি। দুর্ঘটনার পর আহত মনোরঞ্জনকে ‘পর্যাপ্ত’ আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি সাঈদ হাসানের।
সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি প্রচার হলে ঘটনার দুই সপ্তাহ পর মামলা নিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার চালকসহ অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলাটি হয়।