কাজী জেবুননেসা কামাল
রাজধানীর শনির আখড়া থেকে কল্যাণপুরে ফিরছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী কাজী জেবুননেসা কামাল। সাথে মা ছিলেন। বাসে জায়গা না থাকায় মাকে ইঞ্জিনের পাশে বসিয়ে দিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে পাশের একটি সিট ফাঁকা হওয়ায় তিনি বসে পড়েন। এর একটু পর ওই ছাত্রীর পাশে এক ব্যক্তি বসেন।
কাজী জেবুননেসা কামালের ফেসবুকের স্ট্যাটাসে জানা যায়, মাথাব্যথার কারণে তিনি বাসের জানালায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলেন। এমন সময় তিনি বুঝতে পারলেন পাশে বসা ব্যক্তিটি তার গায়ে হাত দেয়। তাৎক্ষণিক এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন ওই ছাত্রী। ‘টি–শার্ট ধরে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে বললাম, তুই গায়ে হাত দিলি ক্যান?’
লোকটা বলে, কী আশ্চর্য! আপনি তো ঘুমাই ছিলেন। চট করে মাথায় রক্ত উঠে যায়। আমি ঘুমিয়ে থাকলেই সে আমার গায়ে হাত দিতে পারে?
তারপর নিজের কান ধরে; আমার ও আমার মায়ের পা ধরে মাফ চেয়ে বাস থেকে নেমে যায়।
গতকাল রবিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় মৌমিতা পরিবহনের বাসে এ ঘটনা ঘটে।
এ প্রতিবাদের সামান্য অংশ ভিডিও করতে পেরেছিলেন বাসের আরেক নারী যাত্রী। সেটি জেবুননেসা ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। শেয়ার পর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এতে জেবুননেসা লিখেন, বাসের একজন পুরুষ যাত্রীও এ ঘটনার প্রতিবাদে এগিয়ে আসেননি। উল্টো বলেছেন, লোকটি যেহেতু ভুল স্বীকার করে মাফ চাইছে, তাই তাকে ক্ষমা করে দেওয়াই ভালো।
তিনি বলেন, ‘লোকটিকে ধরতে বা তার মুঠোফোন নম্বর জানার জন্য অনুরোধ করা হলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। মা এসে প্রতিবাদ করেন। যাত্রীরা এগিয়ে আসেননি বলেই লোকটি বাস থেকে নেমে যাওয়ার সুযোগ পান। নামার আগে মারতে মারতে লোকটির টি–শার্ট ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। যাত্রীরা আইন যাতে নিজের হাতে তুলে না নিই, লোকটিকে যাতে পুলিশে দিই ইত্যাদি বলতে থাকেন। আরে, আমি বাসের মধ্যে পুলিশ কোথায় পাব?’
এই শিক্ষার্থী বলেন, এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত মনে করেছেন বলেই তিনি তা করেছেন। এতে তিনি ভয় পান না। গণমাধ্যমে নাম–পরিচয় প্রকাশ পেলেও তার কোনো আপত্তি নেই। কেননা এ ধরনের প্রতিবাদে তার ব্যবসায়ী বাবা, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বড় ভাই, মামা, নানু, বন্ধু-স্বজনেরা সব সময়ই পাশে থাকেন। তবে নিজের যাতে কোনো বিপদ না হয়, সেজন্য কিছুটা সাবধানও থাকতে বলেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও বেশিরভাগ মানুষ প্রতিবাদ করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ খারাপ মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, বাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে জানা কথা, বাবার গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করলেই তো হয়।
রবিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সোমবার ১১টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত শেয়ার করা পোস্টটিতে ২৭ হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এটি ৫ লাখ ৬৪ হাজার বারের বেশি ভিউ হয়েছে। পোস্টটি শেয়ার করেছেন প্রায় ৯ হাজার মানুষ।
২৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি ছাত্রীর পা ধরে ক্ষমা চান। নামার আগে অভিযুক্তের টি-শার্টের কলার ধরে মারছিলেন ওই ছাত্রী। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির টি-শার্ট ছিঁড়ে যায় এবং তিনি নেমে যেতে সক্ষম হন।