পিটিয়ে শিক্ষক হত্যার আসামি
জিতু দাদা’র মাধ্যমেই চলতো তার সব অপকর্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২২, ১৯:০২

র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার জিতু (ছবি : সংগৃহীত)
ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে
শিক্ষক হত্যার ঘটনায় এরইমধ্যে গ্রেপ্তার আশরাফুল আহসান জিতু। বয়স ১৮ হলেও পড়তো দশম
শ্রেণিতে। ছাত্র হিসেবে পিছিয়ে থাকলেও উচ্ছৃঙ্খলতায় ছিল এগিয়ে। এবয়সেই গড়ে তোলে কিশোর
গ্যাং। নিজের গড়ে তোলা কিশোর গ্যাং ‘জিতু দাদা’র মাধ্যমেই সব ধরনের অপকর্ম করা হতো। এভাবেই বেপরোয়া হয়ে
ওঠে জিতু। তার হাত থেকে রেহাই পাননি শিক্ষকও। সবার সামনেই স্টাম্প দিয়ে শিক্ষককে পিটিয়ে
হত্যা করে দশম শ্রেণির এ শিক্ষার্থী।
আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল
অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যা মামলায় জিতুকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে
এসেছে এসব তথ্য।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে
রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাবের
লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, নিজ এলাকায় ‘জিতু
দাদা’
নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে জিতু। গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র
আধিপত্য বিস্তার করতো সে। পরিবারের কাছে কেউ অভিযোগ করলে নিজের গ্যাং সদস্যদের নিয়ে
তাদের ওপর চড়াও হতো জিতু।
কমান্ডার মঈন বলেন, স্কুলের
এক ছাত্রীকে নিয়ে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করছিল জিতু। এঘোরাফেরা থেকে জিতুকে বিরত থাকতে
বলেন শিক্ষক উৎপল। এঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোয়িজম প্রদর্শন করতে
শিক্ষক উৎপলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জুন স্কুলে ছাত্রীদের
ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে জিতু। এর
পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিক্ষক উৎপল।
ঘটনার পরপরই জিতু পালিয়ে দেশের
বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। পরে বুধবার যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে
জিতু ওরফে জিতু দাদাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
জিতুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানায়, শিক্ষক উৎপলকে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে জিতু এবং পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে।
র্যাবের একর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু এলাকায় থাকলেও পরে আত্মগোপন করে। প্রথমে বাসে মানিকগঞ্জে নিজের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকে। পরদিন অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরিঘাটে পৌঁছায় এবং ট্রলারে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরদিন ভোরে সে আবারো অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আতাইকুলা থেকে বাসে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে লঞ্চে আরিচাঘাট পৌঁছায়। সেখান থেকে বাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে যায়। সেখান থেকেই জিতুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তার জিতুর বিষয়ে তিনি বলেন, সে শিক্ষাজীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল, পরে মাদ্রাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়। জিতু ওই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত সে। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কমান্ডার মঈন বলেন, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং এবং বিরক্ত করতো জিতু। স্কুল প্রাঙ্গণে সবার সামনে ধুমপান, স্কুল ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা করতো সে। জিতুর জেএসসির সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার বয়স ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
খন্দকার আল মঈন বলেন, নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ওই কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ফলে তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, চুলকাটা, ধুমপান করা ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করতেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করাসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখতেন।