
স্ত্রী জান্নাত আরা, ইনসেটে সুমন শেখ
রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে
চুরির মামলায় গ্রেপ্তার সুমন শেখ (২৭) নামের এক আসামির মৃত্যুর ঘটনার ময়নাতদন্তের প্রায়
৪৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর মরদেহ নিয়েছে নিহতের পরিবার।
সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার
দিকে পুলিশ সুমনের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের হিমঘর থেকে
হস্তান্তর করে।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার
(ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আজ দুপুর আড়াইটার
দিকে পুলিশ সুমনের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের হিমঘর থেকে
তার বাবার কাছে হস্তান্তর করে।
সুমনের স্বজনদের সূত্রে জানা
যায়, মরদেহ নেওয়ার পর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের আল মারকাযুলে গোসলের জন্য নিয়ে আসা
হয়েছে।
সুমনের পরিবারের দাবি, সুমন
শেখ রাজধানীর রামপুরায় ইউনিলিভারের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইটের বিপণন কার্যালয়ে
ছয় বছর ধরে চাকরি করতেন। তার মাসিক বেতন ছিল ১২ হাজার টাকা। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দিনগত
রাতে বাসা থেকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। আটকের খবর পেয়ে রাতেই সুমনের পরিবার থানায়
যান। এসময় তাদের জানানো হয়, শনিবার সকালে সুমনকে আদালতে পাঠানো হবে। সকালে পরিবারের
সদস্যরা থানায় গেলে সুমনের মৃত্যুর কথা জানায় পুলিশ।
পরদিন শনিবার (২০ আগস্ট) সুমন
শেখের স্ত্রী জান্নাতের বড় ভাই মোশাররফ হোসেন জানান, রাতে থানা থেকে বলা হয় সুমনের
মরদেহ নিতে হাতিরঝিল থানা থেকে তাদের পাঠানো হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মর্গে। সেখানে রাত ৮টার পর মরদেহ গোপনে নিয়ে যেতে বলে পুলিশ। কিন্তু তারা মরদেহ নেননি।
মরদেহ না নিয়ে তারা বাসায় চলে যান। রবিবার সকালে এ ঘটনায় ইউনিলিভারের পিওরইট কোম্পানি
ও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। মামলা দায়েরের পর পরিবার মরদেহ বুঝে নেবে।
এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে
জানানো হয়, তারা মামলা না করা পর্যন্ত মরদেহ নেবে না। তাদের দাবি সুমনকে মারধর করে
মারা হয়েছে। তবে চুরির মামলার আসামি সুমন থানা হাজতের ভেতর আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি
পুলিশের।
অজানা কারণে মরদেহ নিতে পরিবার বিলম্ব করছে উল্লেখ করে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, এ বিষয়ে নিহতের পরিবার রহস্য তৈরির চেষ্টা করছেন। পেছন থেকে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিসি আজিমুল বলেন, গত ১৫ আগস্ট
ইউনিলিভারের পিউরিট কোম্পানি থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলার পর তিনজনকে
গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক
হোসেন। তারা এখন কারাগারে আছেন। ওই তিনজনের জিজ্ঞাসাবাদ ও চুরির ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ
বিশ্লেষণ করে সুমন শেখকে শনাক্ত করা হয়। এরপর শুক্রবার বিকেলে রামপুরা মহানগর এলাকার
বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুমন শেখকে। তার বাসা থেকে তিন লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার
করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়। এরপর অভিযান শেষে রাত ১১টার দিকে তাকে থানা
হেফাজতে রাখা হয়।
ডিসি আরও বলেন, শনিবার সকালে
সুমন শেখকে আদালতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত ৩টা ৩২ মিনিটে সুমন তার পরনে
থাকা ট্রাউজার দিয়ে লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয়। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে।
এ ফুটেজ নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদেরও দেখানো হয়েছে।
ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার
অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন ডিউটি অফিসার হেমায়েত
হোসেন ও কনস্টেবল মো. জাকারিয়া।