শেষ হলো ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন সোসাইটির আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:৫৪

সম্মেলন থেকে তোলা ছবি। ছবি: সংগৃহীত
ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন সোসাইটি আয়োজিত দুই দিনব্যাপী দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন আজ শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) শেষ হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন শুরু হয়।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন ও জেনেটিক বিষয়ে দক্ষ ২০ জনেরও বেশি বক্তাও জাতীয় পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় চিকিৎসকরা অংশ নেন।
সম্মেলনে ৯৫০ জন দক্ষ ও প্রসিদ্ধ প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। তারা মূলত নিজেদের আরো বেশি দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শুনেছেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব (শিক্ষা) সাইফুল ইসলাম বাদল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক টিএ চৌধুরী এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. আমিরুল মোরশেদ (অতিরিক্ত মহাপরিচালক স্বাস্থ্য শিক্ষা) ও অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম, সভাপতি ওজিএসবি।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ফিরোজা ম্যাডামের উদ্যোগে, ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের একটি ইউনিট হিসেবে যাত্রা শুরু করে। অতি অল্প সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ এই শাখাটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী রোগীদের একটি আশা এবং আস্থার জায়গায় পরিণত হয়। তাদের এই কর্ম তৎপরতা, নিষ্ঠাকে মূল্যায়ন করে এবং একইসাথে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মা ও শিশুর সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ২০১২ সালে বিসিপিএস, ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিনকে একটি স্বতন্ত্র বিশেষায়িত বিষয় হিসেবে অনুমোদন দান করা হয়।
২০১৩ সাল থেকে বিএসএমএমইতে উক্ত বিষয়ে মাত্র দুইজন প্রশিক্ষণার্থী ও তিনজন শিক্ষক নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে এই শাখাটি একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকশিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বাংলাদেশ অ্যাসিস্টেড কন্সেপশন সেন্টার (বিএসিসি) হাসপাতালে উক্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়। এপর্যন্ত উক্ত বিষয়ে ১৫ জন সনদপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণরত আছেন।
২০১৮ সালে অধ্যাপক ফিরোজা বেগমের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় ‘ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (এমএফএমএসবি) একটি স্বতন্ত্র সোসাইটি হিসেবে তার যাত্রা শুরু করে। আর সে বছরেই তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে প্রথম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। এটি প্রসূতি ও গাইনি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ব্যাপক সারা ফেলে এবং উক্ত সম্মেলনে আটশো’র বেশি চিকিৎসক উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করেন।
কোভিড-১৯ মহামারিকালীন সময়ে এই সোসাইটি অনলাইনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে রোগীদের সহযোগিতা করেছে। এই সোসাইটি সবসময়ই মানসম্পন্ন সেবা দান এবং সময়োপযোগী বিভিন্ন ক্লিনিকাল এবং কারিগরি নীতিমালা প্রণয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রসঙ্গত, এবারের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, চিকিৎসাশাস্ত্রের জ্ঞানকে আরো শাণিত ও যুগোপযোগী রাখা এবং রোগীর জন্য সবচেয়ে উত্তম সেবা প্রদান নিশ্চিত করা।
এই সম্মেলন চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জ্ঞানের আদান প্রদানের একটি অনন্য প্লাটফর্ম হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬৫ জন এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১৭ দশমিক ৫ জন। ৫৪ শতাংশ মাতৃমৃত্যুর জন্য দায়ী হলো প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ এবং উচ্চ রক্তচাপ জনিত খিচুনি। টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে উক্ত হার যথাক্রমে প্রতি লাখে ৭০ জন এবং প্রতি হাজারে ১২ জনে নামিয়ে আনা নির্ধারণ করা হয়েছে। ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন সোসাইটি উক্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।
উচ্চমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর নিরাপদ প্রসব নিশ্চিতকরণ এবং প্রসব পরবর্তী জটিলতা নিরসনে কাজ করে এই ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন সোসাইটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘কোয়ালিটি কেয়ার, দি সেভিয়ার’ অর্থাৎ ‘উন্নত সেবাই মুক্তির উপায়’ ধারণ করে সোসাইটির কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী নারীকে জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর পরিস্থিতিতে আশার আলো জাগাতে সোসাইটিটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর জীনগত সমস্যা চিহ্নিতকরণে পূর্ণাঙ্গভাবে সজ্জিত একটি জেনেটিক ল্যাবরেটরি বিশেষ প্রয়োজন বলে জানান বক্তারা। তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে জিনগত পরীক্ষার সুযোগ না থাকলেও বেশকিছু বেসরকারি ল্যাব প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসমূহ করছে। আমরা আশা করব অচিরেই সরকারি পর্যায়ে দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ জেনেটিক ল্যাবরেটরি স্থাপিত হবে।
তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ম্যাটারনাল ফিটাল মেডিসিন সোসাইটি আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন উক্ত প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান করবে।