প্রেমের জন্য সম্রাট শাহজাহান কোটি কোটি স্বর্ণমুদ্রা খরচ করে তাজমহল গড়েছেন। এছাড়া আরও কত প্রেমিক বা প্রেমিকা প্রেমের জন্য অনবদ্য হয়েছেন। তবে এবার বাংলাদেশেও ঘটেছে এমন ঘটনা। প্রেমের জন্য বাবার সিন্দুক ভেঙ্গে প্রেমিককে ১ কোটি ৬৬ টাকা দিয়েছেন এক প্রেমিকা। তবে এমন প্রেমকে সমাজ, রাষ্ট্র বা পরিবার কেউই মেনে নেননি। তাই প্রেমিকেরে কপালে জেলের ঘানি আর প্রেমিকার কপালে তিরস্কার ছাড়া কিছুই জুটছে না আপাতত।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে এমনই ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, গত ২৭ জুন ঠিকাদার আবদুল হামিদের সিন্দুক থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকারচুরি করে মেয়ে মিনা তার প্রেমিক স্বামী সাকিবুল হাসান শান্তকে দিয়েছেন। চুরির ঘটনা জানাজানি হলে গত ৪ জুলাই হামিদ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন আবদুল হামিদ।
সেই মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব ঘটনা। মিনা ও শান্তর সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ার পর বিস্মিত হন তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরাও। এরই মধ্যে শান্তর কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মিনা ব্যারিস্টারি পড়ছেন। আর প্রেমিক স্বামী সাকিবুল হাসান শান্ত রাজধানীর তিতুমীর কলেজের ছাত্র। তবে মিনা যে বিয়ে করেছেন, তা জানতেনই না তার বাবা হামিদ। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের শান্তর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে তারা গত বছরের শেষ দিকে গোপনে বিয়ে করেন। কিন্তু পরিবার মেনে নেবে বলে টাকা চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। তাই পুলিশ ‘দুই চোরের’ মুখ চিহ্নিত করার পর বিস্মিত হন হামিদ। তবে গত ১৫ জুন ঈদুল আজহায় পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান ঠিকাদার হামিদ। ২২ জুন তারা ফিরে এলে মিনা প্রথমে তার মাকে বিয়ের বিষয়টি জানান। আরও অবহিত করেন, এখন অন্তঃসত্ত্বা তিনি।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মিনার বাবাকে বিয়ের কথা জানালে তিনি তা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না- এমন চিন্তা থেকে বাসার সিন্দুক থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করার পর দু’দিন তা বাসার ভেতর লুকিয়ে রাখেন মিনা। ২৯ জুন প্রেমিক স্বামীকে খবর দিলে মিরপুরের মেস থেকে মিনাদের বাড়ির কাছাকাছি একটি এলাকায় যান শান্ত। পরে টাকা ভর্তিব্যাগ নিয়ে সরাসরি তাড়াশ চলে যান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে টাকা ও স্বর্ণলংকার চুরির মামলা হওয়ার পর ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মী, অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এবং মামলার বাদীর পরিবারের সদস্যদের সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছিল। এক পর্যায়ে প্রযুক্তিগত তদন্তে মিনার সঙ্গে শান্তর কথোপকথনের অনেক তথ্য সামনে আসে। ওই যুবকের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বেশ কিছু খুদে বার্তা ডিলিট করেন মিনা। এতে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। এ ছাড়া তদন্ত চলাকালে হঠাৎ এক দিন অসুস্থ হয়ে মিনা হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এর পর ব্যাপক জেরা করলে চুরির টাকা শান্তকে দেয়ার কথা স্বীকার করেন। কৌশলে মিনাকে দিয়ে ফোন করানোর পর টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পর সাকিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার বাদী আবদুল হামিদ জানান, তদন্তে চুরির যে তথ্য এসেছে, এটা কল্পনার বাইরে ছিল। মেয়ে এটা করতে পারে– বিশ্বাস হচ্ছিল না। তার বিয়ের কথাও জানতেন বাবা। ঈদুল আজহার আগে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পেয়েছিলেন তিনি। ঈদের ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় তা জমা দিতে পারেননি। ওই টাকা মেয়ে মিনাকে দিয়ে গণনা করিয়ে সিন্দুকে রাখেন ঠিকাদার হামিদ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মতিউর রহমান বলেন, বাদী মামলা না তুললে এতে তার আপনজনদের আসামি করতে হবে। এখানে পুলিশের কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh