সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা শুরু করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গণপদযাত্রা শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এছাড়া তাছাড়া সারা দেশে প্রায় ৫০টি জেলা থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন তারা। গণপদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
আজ রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ পদযাত্রা শুরু হয়। একইসঙ্গে আন্দোলনে থাকা ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এই গণপদযাত্রায় অংশগ্রহণ করছেন।
গণপদযাত্রায় শিক্ষার্থীরা- ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মেধাবীদের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে, গতকাল শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণভবন অভিমুখে গণপদযাত্রার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তাছাড়া অন্যান্য জেলা থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা৷‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত বলেন, আমরা স্পষ্ট বলতে চাই যে, আমাদের এই আন্দোলন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে না। আমরা চাই কোটার যৌক্তিক সংস্কার। আমাদের দাবি খুব পরিষ্কার। সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় কোটাপদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে। যারা আমাদের রাজপথে রেখে আন্দোলন মেনে নিতে কালক্ষেপণ করছেন, তাদের বলতে চাই আমরা রাজপথে থাকতে চাই না। আমাদের দাবি মেনে নিন আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই।
আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, শিক্ষকরা পেনশন স্কীম বাতিলের দাবিতে আন্দেলন করে আসছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সমর্থন ছিল। এখন আপনাদের সময় এসেছে ছাত্রদের আন্দোলনে আপনাদের একাত্মতা পোষণ করার। আমরা চাইলে ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে পারতাম কিন্তু আমরা তা করিনি। এমন পরিস্থিতি যেন না হয়, যেন শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দিচ্ছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের যৌক্তিক দাবি মানা না হচ্ছে, এই ছাত্র ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য চলমান থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলে যৌক্তিক দাবিতে একতাবদ্ধ।
এদিকে গত শুক্রবার (১২ জুলাই) সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার চেষ্টা ও সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগে কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বেসরকারি এক টেলিভিশনে এক পুলিশ কর্মকতার ওই দিনের দেওয়া রেকর্ড শুনিয়ে বলেন, ছাত্ররা সাঁজোয়া যানের কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করেনি। মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের দিয়ে মামলা করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
মামলা প্রসঙ্গে প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক মামলার বিষয়ে পুলিশের জবাবদিহি চাই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা এ মামলা প্রত্যাহার চাই।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ছাত্র আন্দোলন সরকারি চাকরি রাজধানীর খবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ কোটা বাতিল
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh