সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার (১৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি পালন করবেন কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা।
তবে ভোর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রবেশ পথে পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্যকে মোতায়েন করার পাশাপাশি ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বহিরাগত ও হল থেকে বেরিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাস পরিত্যাগ করা শিক্ষার্থীদেরও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করে দেওয়া হচ্ছে না।
সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের উপর যে নির্দেশনা রয়েছে তারা তা পালন করছেন। তবে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ভোর থেকেই ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকার এমন পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে চারপাশের এলাকাগুলোতেও। গতকাল মঙ্গলবার থেকেই এলাকাগুলোতে আতঙ্ক আর শঙ্কায় রয়েছেন এর বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন, গতকালের ছাত্রলীগ পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এসব এলাকার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়েছে। এছাড়া অনেক বাসিন্দা শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আজ পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলা এবং গুলিবর্ষণে শহীদ ভাইদের জন্য বুধবার দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় জেলায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল পালন করুন। ঢাকায় অবস্থানরত সবাই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সময়মতো চলে আসবেন।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্যে নাখোশ হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে গত রবিবার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
আর এরপরদিন গত সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছিল। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছিল। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চাঁনখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh