কোটা সংষ্কার আন্দোলন

নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সংঘর্ষ আর সহিংসতায় নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার বলছে নিহতের সংখ্যা ১৪৭ জন। আর গণমাধ্যম বলছে, ১৮৫ থেকে ২১০ জন এই আন্দোলনের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই দুই পরিসংখ্যানকে খারিজ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত ২৬৬ জন নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তবে এই সংখ্যা বাড়ছে। এখন সহিংসতা না থাকলেও আগে যারা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে তাদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ মারা যাচ্ছে। তবে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যাটা কত? তা নিয়ে এর মধ্যেই নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই নিয়ে গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং নিহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। পাশাপাশি একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত নিহতের তালিকা প্রকাশের দাবি জানানো হয়।

এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধবিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পরিধিটা অনেক বড় ছিল। সহিংসতা ঘিরে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির আমরা যে চিত্র দেখছি তাতে নিহতের সংখ্যা গণমাধ্যমগুলোতে একেক রকম। যারা আন্দোলন করেছেন তারাও একেকটা সংখ্যা বলছেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বেসরকারি তথ্যের সঙ্গে সরকারি তথ্যের একটা দূরত্ব সব সময়ই থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেও তথ্যের এরকম গরমিল থাকে। তবে সবকিছু মিলিয়ে সাম্প্রতিক আন্দোলন-সহিংসতায় নিহতের যে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে, আমাদের দেশের বাস্তবতায় তার প্রতি আমরা আস্থা রাখতে পারি। 

তৌহিদুল হক বলেন, অতীতেও আমরা দেখেছি এক মাধ্যমের উপাত্তের সঙ্গে আরেক মাধ্যমের উপাত্তের কিছু ব্যবধান থাকে। তবে আমাদের দেখতে হয় যে, ব্যবধানের পরিমাণ কত। অনেক বেশি কিনা, কয়েক গুণ কিনা। এখানে সেরকম বড় ব্যবধান মনে হচ্ছে না। 

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে সহিংষতা ও সংঘর্ষেল ঘটনায়, গত ১৬ জুলাই নিহত হয়েছে ৬ জন, ১৮ জুলাই ৪২ জন, ১৯ জুলাই ৮৫ জন, ২০ জুলাই ৩৮ জন, ২১ জুলাই ২১ জন, ২২ জুলাই ৫ জন, ২৩ জুলাই ৩ জন, ২৪ জুলাই ৩ জন, ২৫ জুলাই ৫ জন এবং গত ২৬ জুলাই একজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বমোট ২০৯ জন নিহত হয়েছেন। আর এর মধ্যে গত সপ্তাহের সোমবার থেকে চলতি সপ্তাহের গত শনিবার পর্যন্ত সব মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায় হয়েছে। 

নিহতদের সংখ্যা নিয়ে অনলাইনে গুগল মিট প্ল্যাটফর্মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত ২৬৬ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তারা একটি তালিকাও প্রকাশ করেছেন। 

তিনি বলেন, নিহত ২৬৬ জনের মধ্যে ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। আমরা ধারণা করছি, এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের অজ্ঞাত ও মিথ্যা হামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাসায় বাসায় এবং মেসে গিয়ে ছাত্র পরিচয় পেলে আটক করা হচ্ছে। 

অন্যদিকে গতকাল রবিবার বিকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। তালিকা যাচাই-বাছাই এবং মৃতের সংখ্যা নির্ণয়ে আরও অনুসন্ধান চলছে।

সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিহতদের সংখ্যা কখনও বলা হচ্ছে ৫০০, কখনও বলা হচ্ছে এক হাজার। সে জন্য সরকারের কাছে যে হিসাব ছিল সেটি দেওয়া হলো। বিভিন্ন হাসপাতাল, বিভিন্ন জেলা থেকে নিহতের এ সংখ্যা পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

নিহতদের তালিকায় কতজন ছাত্র, কতজন পুলিশ এবং কতজন অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে নিহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। তালিকা হাতে পাওয়া গেছে। তাদের সম্পর্কে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। নিহতদের মধ্যে কতজন নারী, কতজন পুরুষ কিংবা কোন পেশার কতজন রয়েছে, সেটি নির্ধারণের কার্যক্রমও চলছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh