
গতকাল রবিবার (১১ আগস্ট) ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বৈষম্য বিলোপের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই রবিবার (১১ আগস্ট) বৈষম্য বিলোপের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রাজধানীর অন্তত ছয় স্থানে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এর মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে সাধারণ আনসার সদস্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুক্তির দাবিতে প্রবাসী অধিকার পরিষদ, ১২ দফা দাবিতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য, অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে ভিকারুননিসায় ও ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
এর মধ্যে সাধারণ আনসার সদস্যরা চাকরি স্থায়ী করার এক দফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় মৎস্য ভবন থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। এতে রাস্তার উভয়দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে গত গত শনিবার প্রেসক্লাবে প্রায় ৩০০ আনসার সদস্য সমাবেশ করেন। সেখানেও তারা এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
আনসার সদস্যরা বলেন, আর চুক্তি নয়, এবার মুক্তি চাই। আমাদের তিন বছর পরপর চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। তখন প্রায় ৬-৭ মাস অলস হয়ে বসে থাকতে হয়। উপার্জনের কোনো উপায় থাকে না। অস্থায়ী চাকরির কারণে সব সময় আমাদের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি।
এদিন বৈষম্য ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেন বিটিআরসির এক দল কর্মকর্তা-কর্মচারী। আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনের সামনে এই বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন তারা। তবে এ সময় চেয়ারম্যান ও অন্য তিন কমিশনার অনুপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, বৈষম্য ও দুর্নীতি করা বর্তমান চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চান তারা। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক ও একান্ত সচিব মো. আমজাদ হোসেন নিপু, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের উপপরিচালক মাহদী আহমদেরও বিচার চান তারা।
এ সময় বিক্ষোভরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের উপপরিচালক মাহদী আহমদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
অন্যদিকে বিটিআরসির অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিটিআরসিতে নানাভাবে বৈষম্য হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাদের বিভিন্ন দাবি রয়েছে। অনেক সিদ্ধান্ত কমিশনারদের অন্ধকারে রেখে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটককৃত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুক্তির দাবি জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতারা। সমাবেশে নেতারা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি আটক হয়েছেন। সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি।
পরিষদের উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান বলেন, শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলনে যাদের ভূমিকা দেখেছেন তারা সবাই দেশপ্রেমিক; তাদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিষদের নেতা সুলতান সরকার বলেন, ‘আমি নিজেই ইরাকপ্রবাসী। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে প্রবাসীদের জীবন আজ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এসব দেশের রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কার করে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের আহ্বান জানান।
এদিন বিক্ষোভ করেছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরাও। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, ঝুঁকিভাতা প্রদান ও ওভারটাইম নিশ্চিত করাসহ ১২ দফা দাবিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভ করেন তারা।
এ সময় বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরে নেতারা বলেন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীও প্রশিক্ষিত বাহিনী। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাহিনীটি অবহেলিত। সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আরএনবির কেউ কাজে যোগদান করবেন না বলেও জানান তারা।
বিক্ষোভ শেষে সব অঞ্চলের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলাপ করে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণার কথাও জানান তারা।