Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

আন্দোলনের শহর ঢাকা

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ২৩:১০

আন্দোলনের শহর ঢাকা

আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি

গত ১৫ বছ‌রে কেউ গণভবন বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যাল‌য়ের সাম‌নে দূ‌রে থাক আশেপা‌শেও যে‌তে পা‌রে‌নি। এমনকি প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সামনেও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। অথচ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের কারণে গত ৫ আগস্টের পর থেকে সয়ের গেট আট‌কে রাখা হচ্ছে।

এখন যার যখন ইচ্ছা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সাম‌নে ব‌সে স্লোগান দি‌চ্ছেন, বিক্ষোভ কর‌ছেন। ড. ইউনূসও বি‌ক্ষোভকারী‌দের ডে‌কে কথা বল‌ছেন। সচিবালয়ের সামনেও বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাধীনভাবে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের উপদেষ্টারাও বিক্ষোভকারীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আশ্বাস দিচ্ছেন। এরপর আশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। 

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের মনের কথা, বৈষম্যের কথা গুরুত্ব দেননি। সরকারের আশেপাশে যারা ছিলেন শুধু তারাই সুবিধা ভোগ করেছেন। করোনা মহামারির পর থেকে দেশের জনপ্রতিনিধিরাও স্বাধীনভাবে জনগণের কথা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারেননি। সংসদ সদস্য ও জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সময়মতো কথা বলতে পারেননি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে রেখেছিলেন আমলারা। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীরাও তাদের বঞ্চনার কথা বলতে পারেননি। 

ফলে টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা হাসিনা সরকার গত ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর সরকারি প্রতিটি দপ্তর ও সংস্থায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চিত রাখার অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় পদায়ন ও পদোন্নতি বঞ্চনা, যৌক্তিক নিয়োগ নীতিমালা তৈরি না করা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক না করেই ইচ্ছামতো দলীয় লোক নিয়োগ দিয়ে বৈষম্যের পাহাড় তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বঞ্চিতরা অধিকার আদায়ে মাঠে নেমেছেন। এ আন্দোলন প্রশাসনের হৃৎপিণ্ড বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের সরকারি দপ্তর ও সংস্থা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ সুযোগে দাবি পূরণের তালিকায় অতীতে দুর্নীতির দায়ে পদোন্নতিবঞ্চিতরাও ঢুকে পড়েছেন।  তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের দিকে হাঁটছেন বলে জানা গেছে। এ জন্য আন্দোলনকারীদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা।

মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের বঞ্চিত ৬৩২ জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালের সামনে তারা এই দাবিতে মানববন্ধন করেন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন। একইভাবে প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কথা প্রতিনিয়ত শুনছেন। গত ১৮ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের কথা শুনতে গিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্বে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এমন ঘটনা গত ১৫ বছরে দেখা যায়নি। এদিকে বাংলাদেশ বেতারের শিল্পী-কলাকুশলীরাও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ৬ দফা দাবি জানিয়ে। চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করছেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডাররা (সিএইচসিপি)। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পরিবার কল্যাণ সহকারীরা চাকরি স্থায়ীকরণের এক দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। এমনকি অটোপাসের দাবিতেও আন্দোলন করছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।

মোটকথা এতদিনের বঞ্চনার কথা বলতে না পারা শব্দরা যেন মুক্তি পেয়েছে। সব না পাওয়ার দাবি আদায়ের আন্দোলনের কেন্দ্র যেন হয়ে উঠেছে সচিবালয়সহ পুরো ঢাকা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫