‘সুরের ভুবনে আমি আজো পথচারী ক্ষমা করে দিও যদি না তোমার মনের মতো গান শোনাতে পারি।’
বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মাহমুদুন্নবীর মতো চলুন আজ আমরাও সুরের ভুবনের পথচারী হই। আপনাদের সঙ্গী করে নিয়ে যাব ঢাকার সুরের ভুবন কলেজ স্ট্রিটে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের ছবি কল্পনায় নিয়ে এলেন তো ভুল করলেন। এখানে বইয়ের গল্প কাহিনি নয়, শোনা যায় গিটার, হারমোনিয়াম, তবলা, ড্রাম, ইউকেলেলে, একতারা, দোতারা কিংবা সেতারের মতো বিভিন্ন দেশি বিদেশি বাদ্যযন্ত্রের সুর। ব্যস্ততম ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সাইন্সল্যাব মোড় থেকে নীলক্ষেতে যেতে ডানে তাকালেই দেখা মিলবে এই কলেজ স্ট্রিটের। আর এখানেই এসব বাদ্যযন্ত্রের ঘরদোর। এখানে পাবেন সুর তোলার সরঞ্জামের সারি সারি দোকান।
শুধু দেশি বাদ্যযন্ত্রই নয়-ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং আমেরিকা থেকে আনা বাদ্যযন্ত্রও মিলবে এসব দোকানে। গিটার, হারমোনিয়াম, অ্যাকুয়েস্টিক ড্রামস, ম্যান্ডোলিন, কি-বোর্ড, তবলা, ইউকেলেলে, একতারা, দোতারা, সেতার, বাঁশি থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের বাদ্যযন্ত্রই পাওয়া যাবে এখানে। শুধু নতুন বাদ্যযন্ত্র নয়, পুরনো বাদ্যযন্ত্রেরও বসবাস এসব দোকানে। নতুন বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি কেনাবেচা করতে পারেন পুরনো বাদ্যযন্ত্রও। আছে সার্ভিসিংয়েরও ব্যবস্থা।
কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় সারি সারি বাদ্যযন্ত্রের দোকানের যেন শেষ নেই। মিউজিক প্লাস, আজাদ ট্রেডার্স, সিভিক মিউজিক পয়েন্ট, সুরনিকেতন, সুরশ্রী, আদি সুরশ্রী, অ্যাকুস্টিকা, মেলোডি অ্যান্ড কোং, টিউন ক্যাসেল, মিউজিক জোন, রিপন মিউজিকসহ ছোট বড় বহু দোকান। চোখ যেন ধাঁধিয়ে যায়। সুরের পাখিদের তো বটেই, আমার মতো বেসুরোদেরও যেন এগুলো ছুঁয়ে দেখা থেকে বিরত রাখা অসাধ্য। তাই মনের সুপ্ত ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলতে ঢুকে পড়লাম ‘মিউজিক প্লাস’ নামের দোকানে। বাহারি বাদ্যযন্ত্রের কালেকশন দেখে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে নিমিষেই।
মিউজিক প্লাসের স্বত্বাধিকারী রতন রায় জানালেন, ৩০ বছরের বাদ্যযন্ত্রের পারিবারিক ব্যবসা তার। ২০০৭ সালের দিকে কলেজ স্ট্রিটে মিউজিক প্লাস গড়ে তোলেন তিনি। সুরের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই ব্যবসার সাথে সখ্য। যন্ত্র কেবল কেনাবেচাই নয়, রতন রায় এ সব বাদ্যযন্ত্র বাজাতেও জানেন। শুধু জানেনই না, শেখানও বটে। এখন মিউজিক প্লাসের দুটো শোরুম এই কলেজ স্ট্রিটে।
চোখ পড়ল আরেকটি দোকান, আজাদ ট্রেডার্সে। এই দোকানে গিটার আর ইউকেলেলের ভিড়টাই বেশি, অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র কিছুটা কম। এসব গিটারের কিছু অংশ আসে ফ্রান্স এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে। আছে বাদ্যযন্ত্র শেখানোর ব্যবস্থাও।
কথা হয় আজাদ ট্রেডার্সের ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিকীর সাথে। তিনি জানান, কলেজ স্ট্রিটে এটিই একমাত্র মুসলিম মালিকানাধীন দোকান। ৪০ বছরের ব্যবসা তাদের। এখানে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ইউকেলেলের। দেখতে গিটারের মতোই যন্ত্রটি আকারে ছোটখাটো। ২০১৫ সালের পর থেকে ইউকেলেলের চাহিদা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে। ছোট আকারের জন্য বহনে সুবিধা, আর এটা বাজানো শিখতেও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের থেকে তুলনামূলক সোজা।
দূরদূরান্ত থেকে বাদ্যযন্ত্র কিনতে কলেজ স্ট্রিটে অনেকেই আসেন। দরদামে ও বাদ্যযন্ত্র যাচাই-বাছাইয়ে দক্ষ এমন কাউকে সাথে নিয়ে এ ধরনের বাদ্যযন্ত্র কিনতে আসা উচিত।
কলেজ স্ট্রিটের আশেপাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ঢাকা কলেজ, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুল। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কলেজ স্ট্রিট মোড় বাদ্যযন্ত্র কেনাবেচার একটা ভালো কেন্দ্র বলে মনে করেন অধিকাংশ স্বত্বাধিকারী। তাই ২৫-৩০ বছর আগে থেকেই এই জায়গাকে বেছে নিয়েছিলেন বাদ্যযন্ত্র ব্যবসায়ীরা।
কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের মতোই ঢাকার কলেজ স্ট্রিটও নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh