সাংবাদিক পরিচয়ে ভয়ঙ্কর প্রতারণা তুতু’র

নুজহাতুল হাসান রাজিব ওরফে তুতু। বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাটিকামারীতে। বাবার নাম মৃত মালেক মিয়া।

বর্তমানে তুতু থাকেন রাজধানীর পল্লবী এলাকায়।

অভিযোগ রয়েছে, তুতু একজন ভুয়া সাংবাদিক। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাই তার মূল পেশা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের নামে নানারকম কুৎসা রটিয়ে প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি ডিজিটাল আইনে মামলাও হয়েছে। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভুয়া সমন্বয়ক সেজে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তুতুর বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেপরোয়া জীবনযাপনের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে ছোটবেলায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় পরিবার। বাবা মা ও ভাইয়েরা পর্যন্ত বিরক্ত তার অপকর্মে।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি জাল জালিয়াতিতে সিদ্ধহস্ত। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট জাল। এর আড়ালে মূলত তার পেশা প্রতারণা।

শুধু তিনিই নন এমনকি তার স্ত্রীও এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। স্বামী আর স্ত্রী মিলে বিভিন্ন মানুষের বিরুদ্ধে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের হোয়াটসআপে পাঠান। এরপর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন।

ভুক্তভোগীদের অনেকে ভয়ে টাকা দিতেন আবার অনেকেই দিতেন না। যারা টাকা দিতেন না তাদের নানাভাবে হয়রানি করতেন। এভাবে সাংবাদিকতার আড়ালে চলতো তাদের অপরাধী জীবন।

জানা যায়, প্রায় বছর চারেক আগে কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ-এর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে একাধিক ডিজিটাল কন্টেন্ট বানিয়ে তাদের হোয়াটসআপে পাঠান। সেখানে হয়রানিমূলক ভাষ্য দিয়ে এসব কন্টেন্ট ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার হবে জানিয়ে কোটি টাকা দাবি করেন। পরে কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির মামলা করে।

সেই মামলার তদন্তে বের হয় নুজহাতুল হাসান তুতু আর তার ভাগিনা হাদিউজ্জামান হেলাল এ কাজে জড়িত। আদালতে ১৬৪ ধারায় অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। সেই মামলায় চার্জশীট হলে পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তুতু। এরপর আদালতে দুই বছরের সাজা হয়। জেল থেকে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তুতু। ক্রিমিনাল মামলা থাকায় তুতুর পাসপোর্ট ব্লক করে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।

মিরপুরে একটি চাঁদাবাজির অভিযোগে ডিবি পুলিশ আটক করলে স্ত্রীসহ শ্বশুড়বাড়ির লোকজন এসে ভালো আচরণের শর্তে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন। এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন পুনর্বাসনের জন্য নিয়ে গেলেও সে পালিয়ে আসেন এবং অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেন।

তিনি বিভিন্ন মানবাধিকার কমিশনের ব্যানারে মানুষের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এখন সমন্বয়কদের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে মিথ্যা মানহানিকর সংবাদ প্রচার করে নানান হয়রানিসহ চাঁদাবাজি করছে অভিযোগ উঠেছে।

তুতুর বিষয়ে জানতে চাইলে বড় ভাই নুজহাদ বাপ্পি বলেন, তুতুর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই। সে তার মতো থাকে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ শুনেছি।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে নুজহাতুল হাসান রাজিব তুতু বলেন, পুলিশের এসবি শাখার প্রধান মনিরুল ইসলামের স্ত্রী শায়লা ফারজানা তার চাচাতো বোন। জমি-জমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ থাকায় মনিরুল ইসলাম এ সব মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

তুতু দাবি করেন, মনিরুলের আদেশে ডিবি পুলিশ বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। কয়েকদিন আটকে রেখে ডিবি পুলিশ নির্যাতন চালায়।

পুলিশের হয়রানির ভয়ে অধিকাংশ দিন পালিয়ে থাকতে হয় বলে দাবি করেন তুতু।

পল্লবী থানার এসআই কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, তুতুর নামে থানায় কয়েকটি জিডি রয়েছে। সেগুলো তদন্তাধীন। জিডিগুলো বেশিরভাগই প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়ভীতি সংক্রান্ত। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh