‘পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা থাকায় মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অদক্ষরা’

উপসচিব হিসেবে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা থাকায় ‘অদক্ষ’ ও ‘অনভিজ্ঞরা’ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব আসার সুযোগ পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান।

আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত ‘জন-আকাঙ্খা পূরণে প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

মফিজুর রহমান বলেন, প্রশাসন ক্যাডার থেকে উপসচিব হওয়ায় বাজেটের প্রথম নয় মাসে কোনো কাজ হয় না। বাকি তিন মাসে তড়িঘড়ি করে টাকা খরচ করা হয়। এতে সেবা পাওয়ার পরিবর্তে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশের মানুষ।

তিনি বলেন, আমাদের ২৫ ক্যাডারের প্রতি বৈষম্যের বিষয় নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি। কোনো কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছি। তার পরেও যাদের কাছে আমাদের কাজ, সেই জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আমাদের সঙ্গে দেখা করেনি।

‘এই সংস্কার কমিশন যখন গঠন হয়, আমরা আপত্তি করেছিলাম। কারণ কমিশন গঠন হয় প্রশাসন ক্যাডারের লোকজন দিয়ে। যে কমিশন নিজেই পক্ষপাতদুষ্ট, সেই কমিশন ভালো কিছু করতে পারবে না, সেটা আমরা আশঙ্কা করেছিলাম।’

‘তারপরেও আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাইনি। আমরা আশা করেছিলাম, এই কমিশনকে সহযোগিতা করে একটি সুন্দর সমাধান হবে।’

শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা বলেন, সিভিল সার্ভিসে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। একেকটি ক্যাডার একটি কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করবে।

‘কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, একটি ক্যাডার সব ক্যাডারের উপরে বসে অদক্ষতার ভিত্তিতে এবং অনভিজ্ঞতার ভিক্তিতে সব সমস্যা সমাধান করছে। ফলে এই রাষ্ট্র কখনও সেবামূলক হতে পারেনি।’

মফিজুর রহমান বলেন, এই দেশে এক বছরের জন্য যে বাজেট হয়, সেই বাজেটের প্রথম নয় মাসে শতকরা ৫ ভাগ কাজ হয়। নয় মাস শেষে বলা হয় টাকা খরচ করতে হবে। কারণ ওই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নাই।

‘তিনি বারবার ফাইলের ওপরে লিখেন, খতিয়ে দেখুন তলিয়ে দেখুন। খতিয়ে দেখতে দেখতে, তলিয়ে দেখতে দেখতে নয় মাস পার করেন। তারপরে শেষ তিন মাসে বাজেট খরচ করেন।’

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জন-আকাঙ্খা পূরণে প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস চায় না, এমন কোনো মানুষ বাংলাদেশে নেই। কিন্তু এই প্রত‌্যাশা ৫৩ বছরে পূরণ হয়নি। প্রত্যেক ক্যাডারের বঞ্চনা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারে গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হলো, যা অন্য ক্যাডারে নাই। ইচ্ছামত রাতের অন্ধকারে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। ২৬ ক্যাডারের পরিবর্তে ছয়টি গুচ্ছ ক্যাডার করা হচ্ছে বলে শুনেছি, সেটাও গভীর ষড়যন্ত্র; ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করা।’

এসসিভিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, ‘ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার, এটা যৌক্তিক।’

সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মুহিত চৌধুরীকে বলতে চাই, আপনি ২৫ ক্যাডারের সঙ্গে না বসে বড় ভুল করেছেন।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh