বেক্সিমকো গ্রুপের শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৪২ হাজার কর্মী ও তাদের পরিবারে চরম আর্থিক দুর্দশা নেমে এসেছে। এমন অবস্থায় কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, এসব কারখানা চালু করা না হলে দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি), রাজধানীর পল্টনে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান বেক্সিমকো টেক্সটাইল ও এর সহযোগী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারী প্রতিনিধিরা।
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের পারিবারিক নিয়ন্ত্রণে থাকা বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকরা পড়ে বেকায়দায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “কারখানাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এতে তাদের পরিবারগুলোর জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়েছে। পাশাপাশি দেশের গার্মেন্টস সেক্টর ও অর্থনীতির উপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের হেড অফ অ্যাডমিন মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, বেক্সিমকো গ্রুপের গার্মেন্ট ডিভিশনের একটি গার্মেন্টের অ্যাডমিন সৈয়দ মোহাম্মদ এনামুল্লাহ্, বেক্সিমকো গ্রুপের হেড অফ প্রোডাকশন মোহাম্মদ আব্দুল মুন্নাফ হোসেন মুন্না।
নিজের ভাই আহমেদ সোহেল এফ রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সালমান ১৯৭২ সালে গঠন করেন বেক্সিমকো (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড), যা পরে গ্রুপ হিসেবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে বিভিন্ন খাতে।
ওষুধ, বস্ত্র, আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, প্রকৌশল, মিডিয়াসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবসা।
সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তার সংশ্লিষ্ট সকল ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে। বেক্সিমকো গ্রুপকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া জনতা ব্যাংকও অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬টি কারখানা যেগুলোতে শ্রমিক ও কর্মী সংখ্যা ৪২ হাজারের বেশি। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শ্রমিকরা এসব কথায় খুব একটা আস্থা লাখছেন না। বুধবার তারা গাজীপুরে বড়সড় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সামনে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক প্রতিনিধিরা তিনটি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো:
বেক্সিমকো গ্রুপের গার্মেন্ট ডিভিশনের হেড অফ অ্যাডমিন সৈয়দ মোহাম্মদ এনামুল্লাহ্ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে একটাই দাবি জানাই, তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করে কারখানাগুলো চালু রাখতে এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত না করতে ব্যবস্থা নেন।
‘‘যারা সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
বেক্সিমকো গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের হেড অফ অ্যাডমিন মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘‘আমাদের কোনো শ্রমিক-কর্মচারী কোনো কারখানায় হামলা করেনি। এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষ রয়েছে।’’
এদিকে, শ্রমিকদের দাবিগুলো ‘অত্যন্ত অযৌক্তিক’ দাবি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারি) বেক্সিমকোর শ্রমিকরা সমাবেশ করে বলেছে তাদের তিনটা দাবি। দাবিগুলো আমার মনে হয় কোনো সরকারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। অত্যন্ত অযৌক্তিক এসব দাবি। তারপরও তারা বলেছে মানববন্ধন করবে রাস্তাঘাট বন্ধ করবে। তারা করেছেও, আমরা কিছু বলিনি। পুলিশ মোতায়েন ছিল, আর্মি মোতায়েন ছিল, তারাও তাদের বাধা দেয়নি।
সাখাওয়াত বলেন, গতকাল যা হয়েছে আপনারা জানেন। ১০০টির বেশি বাস জ্বালানো হয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে। এটি করার কথা ছিল না। এটি কখনো হয়নি। হঠাৎ করে এটি কেন হলো, তা আমরা খতিয়ে বের করবো।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি এটি করে তারা সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। শ্রমিকদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা টোটালি ফলস কাজ করেছেন। তারা দেশবাসীর জন্য বড় সংকট তৈরি করতে যাচ্ছিল ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বেক্সিমকো গ্রুপ শ্রমিক প্রতিনিধি বেক্সিমকোর কারখানা বন্ধ বেক্সিমকোর শ্রমিক শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh