নানা
সমীকরণের পর অবশেষে মাঠে গড়াচ্ছে এশিয়া ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। কাল পাকিস্তান
ও নেপালের ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ-২০২৩ এর আসর। এবারের এশিয়া কাপের আসরে
অংশ নেবে বাংলাদেশসহ ছয় দল।
শক্তিমত্তার
বিচারে এবারের বাংলাদেশ দল অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে থাকলেও শঙ্কা জাগছে ওপেনিং নিয়ে।
এর আগে ২০২২ সালের
এশিয়া কাপ ছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। তবে এ আসরে পূর্বরূপ ওয়ানডে ফর্মেটে ফিরছে
এশিয়া কাপ। আর বাংলাদেশ দল এ সংস্করণে এগিয়ে আছে বলে সমর্থকরা এবার আশায় বুক বাধছেন
নতুন করে।
গত
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে
বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস ওপেন
করছেন তামিম ইকবাল। তবে নানা নাটকীয়তার পর তিনি খেলছেন না
এবারের এশিয়া কাপে। এই ওপেনারের
অনুপস্থিতিতে যার কাঁধে ছিল
গুরু দায়িত্ব সেই লিটন দাসকে
পাওয়া নিয়েও আছে শঙ্কা। জ্বরের কারণে এখনও দলের সঙ্গে যোগ
দিতে পারেননি তিনি। তাই নিজেদের প্রথম ম্যাচে লিটনের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সেক্ষেত্রে মূল স্কোয়াডে সুযোগ
মিলতে পারতো সাইফ হাসানের। কিন্তু
এই ওপেনার ডেঙ্গু আক্রান্ত। তাই ওপেনিংয়ে লিটনের
বিকল্প হিসেবে স্কোয়াডে সুযোগ মিলতে পারে দলের বাইরে
থাকা জাকির হাসানের।
লিটনের
অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস ওপেন
করতে দেখা যেতে পারে
মোহাম্মদ নাঈম শেখকে। সাম্প্রতিক
সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ব্যাটে রীতিমতো
রানবন্যা। তাই লম্বা সময়
পর এশিয়া কাপ দিয়ে আবারও
তার জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন। লিটনের
অসুস্থতায় প্রথম ম্যাচে একাদশে সুযোগ মিলতে পারে তার। প্রথম
ম্যাচে ওপেনিংয়ে নাঈমের সঙ্গী হবেন তানজিদ তামিম।
এই তরুণ সর্বশেষ ইমার্জিং
এশিয়া কাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স
করেছেন। তার পুরস্কার স্বরূপই
এবার মূল এশিয়া কাপে
সুযোগ পেলেন। সব ঠিক থাকলে
৩১ আগস্ট শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখবেন তিনি।
ওপেনিং
নিয়ে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে চিন্তার ভাঁজ থাকলেও মিডল অর্ডার খানিকটা
স্বস্তি দেবে। তিন নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ
পজিশনে খেলবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই টপ অর্ডার
ব্যাটার ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার সাম্প্রতিক ফর্মও
ভালো। সবমিলিয়ে ওপেনাররা ব্যর্থ হলে শান্তর ব্যাটে
দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল।
চার
নম্বরে দেখা যাবে সাকিবকে।
নেতৃত্ব সামলানোর পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে আস্থার প্রতীক তিনি। মিডল অর্ডারে তরুণদের
সঙ্গে সাকিবের অভিজ্ঞতা দলের ব্যাটিং লাইনআপে
ভারসাম্য আনবে।
পাঁচে
খেলবেন তাওহীদ হৃদয়। এই তরুণ ব্যাটার
খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও ইতোমধ্যেই
নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন তিনি। ব্যাটিংয়ে সাকিবের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন হৃদয়।
বড় ইনিংস খেলার সঙ্গে দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য
আছে তার। স্কিল কিংবা
ট্যাকনিকেও বেশ সমৃদ্ধ এই
ব্যাটার। পাশাপাশি অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে
বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতাও আছে
তার।
ছয়
নম্বরে দেখা যাবে মুশফিকুর
রহিমকে। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের
হয়তোবা ক্যারিয়ারের শেষ এশিয়া কাপ
এটা। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসেও কথা বলছে
তার ব্যাট! সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ যে
কয়টা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে তার প্রায় সবগুলোতেই
দলের সেরা ব্যাটারদের একজন
ছিলেন তিনি। মুশফিকের ফর্ম আর অভিজ্ঞতা
দলের জন্য বাড়তি পাওয়া।
সাত
নম্বরের আলোচিত পজিশনের আপাতত সমাধান মেহেদি হাসান মিরাজ। এই স্পিন বোলিং
অলরাউন্ডার ব্যাটটাও ভালোই চালাতে পারেন। প্রায় বছর ছয়েক ধরে
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। এই সময়ে বোলিংয়ে
বেশি মনযোগী হলেও ব্যাটিংয়েও যে
কয়বার সুযোগ পেয়েছেন তাতে নিজেকে প্রমাণ
করেছেন। তাই শেষ পর্যন্ত
ফিনিশার হিসেবে তার ওপরই আস্থা
রাখতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।
তবে
এই জায়গায় বেশ কিছু অপশন
আছে বাংলাদেশের। শামিম হোসেনের হার্ড হিটিং সামর্থ্য লোয়ার মিডল অর্ডারের জন্য
তাকে এগিয়ে রাখবে। তাছাড়া তার সাম্প্রতিক ফর্মও
ভালো। এই পজিশনের আরেক
প্রতিযোগী আফিফ হোসেন। তিনি
লম্বা সময় এই পজিশন
ধরে রেখেছিলেন। তবে এ বছরের
শুরুর দিকে বাজে ফর্মের
কারণে দল থেকে বাদ
পড়েন। তবে সম্প্রতি ঘরোয়া
ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে আবারও দলে
ফিরেছেন। এই দুইজনের চেয়ে
মিরাজ এগিয়ে আছেন তার অলরাউন্ড
সামর্থ্যের কারণে। তাই মিরাজ ফিট
থাকলে এই দুইজনকে সাইড
বেঞ্চেই বসে থাকতে হবে।
স্পিনে
বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব। অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি বরাবরই
আস্থার নাম। কন্ডিশন যাই
হোক সেটার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যই সাকিবকে সেরাদের কাতারে এনে দিয়েছে। সাকিবের
সঙ্গে নিয়মিতই একাদশে দেখা যাবে মেহেদি
হাসান মিরাজকে। এই ডানহাতি অফ
স্পিনারও উপমহাদেশের মাটিতে বেশ কার্যকরী। এই
দুইজন ছাড়াও যদি বাড়তি কোনো
স্পিনার একাদশে সুযোগ পায় তাহলে কপাল
খুলবে নাসুম আহমেদের। প্রতিপক্ষ আর কন্ডিশন অনুযায়
তার সুযোগ পাওয়ার অবশ্য খুব একটা সম্ভাবনা
নেই। ব্যাকআপ স্পিনার হিসেবে স্কোয়াডে আছেন শেখ মেহেদি
হাসান। তাছাড়া হাত ঘুরাতে পারেন
শান্ত, হৃদয়, আফিফ ও শামিম।
বিগত
যেকোনো আসরের থেকে এবারের এশিয়া
কাপে সেরা পেস আক্রমণ
পাচ্ছে বাংলাদেশ। যেখানে নেতা হিসেবে সামনে
থেকে নেতৃত্ব দেবেন তাসকিন আহমেদ। এই ডানহাতি পেসার
সাম্প্রতিক সময়ে ফিটনেস এবং
ট্যাকনিক্যাল সামর্থ্য দুই দিকেই উন্নতি
করেছেন। তাসকিন যদি পেস বিভাগের
সেনাপতি হন, তাহলে তার
সবচেয়ে বিশ্বস্ত সৈনিক হবেন মুস্তাফিজুর রহমান।
বাঁহাতি এই পেসার স্লো
উইকেটে বরাবই ভয়ংকর। এই দুইজনের সঙ্গে
একাদশে নিয়মিত হবেন হাসান মাহমুদ।
তবে রোটেশন পদ্ধতিতে গেলে বা কাউকে
বিশ্রাম দিলে সুযোগ মিলবে
শরিফুল ইসলামের।
বাংলাদেশ
স্কোয়াড : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক),
মুশফিকুর রহিম, নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন, লিটন
দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, নাজমুল হোসেন শান্ত, শরীফুল ইসলাম, শেখ মেহেদী হাসান,
তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব, নাঈম শেখ, তাওহীদ
হৃদয় ও তানজীদ তামিম।
স্ট্যান্ডবাই
ক্রিকেটার : সাইফ হাসান ও
তাইজুল ইসলাম।