
সাকিব আল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। আজ থেকে সাড়ে ২৬ বছর আগেও ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার বিষয়টি ছিল বাংলাদেশের জন্য দূর কল্পনার এক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের দরজা খুলে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফির প্রথম সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ৫১ রানের জয়ে। বাংলাদেশ পায় ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র। পূর্ণ হয় পরম আরাধ্য স্বপ্ন।
পরে ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নও হয়। তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের মাধ্যমেই বিশ্বকাপের রঙিন দুনিয়ায় প্রবেশাধিকার পায় বাংলাদেশ। দিনটা ছিল ১৯৯৭ সালের ৮ এপ্রিল। তারিখটি নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে। লেখা থাকবে চিরকাল। পরে ১৩ এপ্রিল ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে ২ উইকেটে নাটকীয় জয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে আকরাম খানের বাংলাদেশ।
সেই থেকে সাড়ে ২৬ বছরের পথ পেরিয়ে, এ পর্যন্ত ৬টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দল হিসেবে বাংলাদেশ দলীয়ভাবে কতটুকু সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে, সেই হিসাবে পরে আসছি। তবে তার আগে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ৬টি আসরে খেলার মধ্যদিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন-সাকিব আল হাসান।
সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অর্জন। দেশের সীমানা পেরিয়ে সেই ২০০৯ সালেই নাম লিখিয়েছেন বিশ্ব তারকার খাতায়। পরের ১৪ বছরের পথ চলায় সাকিব ঢুকে পড়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরাদের তালিকায়। বিশ্ব ক্রিকেটের পরিসংখ্যান স্পষ্ট করেই এই ঘোষণা দিচ্ছে। যে তালিকার ক্রিকেটারদের নামের সঙ্গে যোগ করা হয় দারুণ একটা শব্দ-কিংবদন্তি।
বিস্ময়কর তথ্য হলো, ক্রিকেট পরিসংখ্যানের পাতায় সাকিব যত বড় তারকা, বিশ্বকাপ মঞ্চে তার তারকাদ্যুতির আলো তারও বেশি! স্বদেশি বলে পক্ষপাতিত্বের দৃষ্টিতে বাড়িয়ে বলছি না, ক্রিকেট বিশ্বকাপের (ওয়ানডে) পরিসংখ্যানেই এই ঘোষণাবাণী প্রচারিত হচ্ছে। কষ্ট করে বিশ্বকাপ পরিসংখ্যানের পাতায় ঢুঁ মারলেই ‘সাকিব-শ্রেষ্ঠত্বের’ ঘোষণা বাজনা শুনতে পাবেন। যারা অলসতার বিলাসিতায় পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটিতে রাজি নন, তাদের জন্য পরিসংখ্যানের চুম্বক অংশটুকু তুলে ধরা হচ্ছে।
সাকিব ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯-এ পর্যন্ত ৪টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই ৪ আসরে বাংলাদেশের ২৯টি ম্যাচেই খেলেছেন তিনি। ২৯ ম্যাচের ২৯ ইনিংসেই ব্যাট করে সাকিব করেছেন ১১৪৬ রান। গড় ৪৫.৮৪ গড়, স্ট্রাইক রেট ৮২.২৬। ২টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি হাফসেঞ্চুরি ১০টি। ব্যাট হাতের এই ১১৪৬ রান সাকিবকে জায়গা দিয়েছে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকার ৯ নম্বরে!
পাশাপাশি বল হাতে ২৯ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৪ উইকেট; যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় তাকে যৌথভাবে ১৬ নম্বরে জায়গা করে দিয়েছে। আছে ম্যাচে ১ বার ৫ উইকেট প্রাপ্তির তৃপ্তিও। যদি ব্যাটিং ও বোলিং পরিসংখ্যান এক পাল্লায় তুলে ‘অলরাউন্ড’ পারফরম্যান্স বিচার করেন, তাহলে সাকিবের সমতুল্য ইতিহাসে আর কেউ নেই। ঠিকই পড়েছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ব্যাট-বলের অলরাউন্ড পরিসংখ্যানে সবার সেরা-বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান।
ব্যাটিংয়ে তার চেয়ে বেশি রান যে ৮ জন করেছেন, উইকেট শিকারে তাদের কেউই সাকিবের ধারের কাছে নেই! আবার যারা বল হাতে তার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন, তাদের কেউই রানের দিক থেকে তার ধারে-কাছে নেই। সনাত জয়াসুরিয়া, জ্যাক ক্যালিস, ইমরান খান, ইয়ান বোথাম, ভিভ রিচার্ডসদের মতো কিংবদন্তিরাও বিশ্বকাপের অলরাউন্ড পরিসংখানে সাকিবের চেয়ে অনেক অনেক পেছনে। তাই পরিসংখ্যানের বিচারে এটা বলা যায়ই, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানই বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডার। দেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান এবং সর্বোচ্চ উইকেট, দুটি রেকর্ডই তার। এমন কীর্তিও বিশ্বকাপ ইতিহাসে বিশ্বের আর কারও নেই। বিশ্বের আর কেউই বিশ্বকাপে নিজ দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান ও সবচেয়ে বেশি উইকেটশিকারি বনে যাওয়ার হিম্মত দেখাতে পারেননি! সাকিবের অলরাউন্ড-শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রয়েছে এই তথ্যেও।
সাকিবের বিশ্বকাপ মিশন শুরু ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ১৭ মার্চ ক্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভাল স্টেডিয়ামের সেই ম্যাচে বল হাতে উইকেট না পেলেও সাকিব দলকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেওয়ার পথে ব্যাট হাতে খেলেছিলেন ৮৬ বলে ৫৩ রানের ধৈর্যশীল এক ইনিংস। ১৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় পেতে বাংলাদেশের মতো দলের ধৈর্যশীল ব্যাটিংই দরকার ছিল। সেই দরকার মেটাতে গিয়ে ১টি ছক্কা এবং ৫টি চারও মানের সাকিব। ওই ম্যাচে তার চেয়েও বেশি রান করেছিলেন মুশফিকুর রহিম, ১০৭ বলে অপরাজিত ৫৬, ওপেনিং নেমে তামিম ইকবাল করেছিলেন ৫৩ বলে ৫১ রান। তাদের ছাপিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। তবে ওই ম্যাচেই যেন সাকিব বার্তা দিয়েছিলেন-আমি এসেছি ইতিহাস রচনা করতে!
সেই ইতিহাস রচনার পথে সাকিব সবচেয়ে বড় কারিশমাটা দেখিয়েছেন সর্বশেষ ২০১৯ বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডের এই আসরে সাকিব ব্যাট হাতে নিয়েছেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬০৬ রান। সেটাও মাত্র ৮ ম্যাচে। তার গড় ছিল টুর্নমেন্টে সর্বোচ্চ রান করাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৮৬.৫৭! স্ট্রাইক ছিল ৯৬.০৩! দুটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন ৫টি। মানে ৮ ম্যাচের ৭টিতেই ৫০ বা তার বেশি রানের ইনিংস খেলেন সাকিব। খেলেছিলেন ৭৫, ৬৪, ১২১, ১২৪*, ৪১, ৫১, ৬৬ ও ৬৪ রানের ইনিংস। কি অবিশ্বাস্য ব্যাটিং! মানে ৮ ম্যাচে একবার মাত্র হাফসেঞ্চুরি ছুঁতে ব্যর্থ হন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচটিতেও করেছিলেন ৪১ রান।
টুর্নামেন্টে তার চেয়ে বেশি রান করেছিলেন কেবল দুজন-ভারতের রোহিত শর্মা (৯ ম্যাচে ৬৪৮) এবং অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার (১০ ম্যাচে ৬৪৭)। রানে এগিয়ে থাকা এই দুজনেই ওপেনার, যাদের লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। সেখানে সাকিব মিডল-অর্ডারে ব্যাট করেই তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের আসরটিতে যে অবিশ্বাস্য ফর্মে ছিলেন সাকিব, কে জানে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে না গেলে হয়তো তার নামটিই থাকত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তালিকার এক নম্বরে।
বিস্ময়কর অলরাউন্ড নৈপুণ্যে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারের দৌড়ে ওপরের দিকেই ছিলেন সাকিব। পরিসংখ্যান বিচারে তো পুরস্কারটা তার হাতেই ওঠার কথা ছিল; কিন্তু বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় বলেই কি না কে জানে, আইসিসির ম্যাচ অ্যাডজুকেটিভরা সাকিবকে বঞ্চিত করে পুরস্কারটা তুলে দেয় রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের হাতে। যিনি ১০ ম্যাচে রান করেছিলেন চতুর্থ সর্বোচ্চ ৫৭৮, বল হাতে উইকেট নিয়েছিলেন ২টি।
কিন্তু সাকিব ব্যাটিংয়ে বিস্ময়কর দ্যুতি ছড়ানোর পাশাপাশি, বল হাতেও ৮ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১১টি উইকেট। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যে তিনটি জয় পায় (দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে), সেই তিন ম্যাচেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন সাকিব; কিন্তু তারপরও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার তার ভাগ্যে মিলেনি।
যাই হোক, সব মিলে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে যে ৪০টি ম্যাচ খেলেছে, তার ২৯টিতে খেলেছেন সাকিব। দলের মোট ১৪টি জয়ের ১২টি জয়েরই অংশীদার তিনি। এর মধ্যে বেশির ভাগ জয়েই সাকিব রেখেছেন বড় ভূমিকা। তিনবার হয়েছেন ম্যাচসেরাও।
২০২৩ বিশ্বকাপ যে হাতছানি দিচ্ছে সাকিবকে
দুনিয়াবী জীবনের বয়সের দাঁড়িতে ৩৬ বছর পেরিয়ে ৩৭-এ চলছেন। বয়সের এই সংখ্যাটা বলছে, আসন্ন ২০২৩ ভারত বিশ্বকাপই হয়তো সাকিবের শেষ বিশ্বকাপ। কারণ, পরের বিশ্বকাপ আসতে আসতে তার বয়স ৪১ হয়ে যাবে। ওই বয়সে ফর্ম ধরে রেখে বিশ্বকাপে খেলাটা কঠিনই। তাছাড়া সাকিব যেভাবে ব্যবসা এবং রাজনীতির পেছনে দৌড়াচ্ছেন, তাতে ২০২৭ বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, এই বিশ্বকাপের পরই সাকিব নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেন কি না, কে জানে!
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়ও গুঞ্জন ছড়িয়ে ছিল আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারেন সাকিব। তবে সেবার সাকিবে জড়িয়ে সেই গুঞ্জন সত্য না হলেও মাশরাফি বিন মুর্তজা ঠিকই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে আওয়ামী লীগের হয়ে এমপি হয়েছেন। তার পথ ধরে এবার সাকিবও এমপি নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বলেই জোর গুঞ্জন বাতাসে। গত মাসে এশিয়া কাপের মাঝপথে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরে তিনি এমপি প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সংসদ ভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা এবং কথাও বলেছেন বলেই গুঞ্জন রয়েছে। যেহেতু জাতীয় দলের হয়ে খেলা অবস্থায় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের সুযোগ নেই, তাই আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে তাকে আগে ক্যারিয়ারের বিদায়ঘণ্টা বাজাতে হবে। সাকিব কি করবেন, সেটা সময় হলেই জানা যাবে। তবে আপাতত তার চিন্তা-চেতনা, পরিকল্পনা, মনোযোগ-সবই ভারত বিশ্বকাপ নিয়ে।
৫ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপের ১৩তম আসরটি সাকিব খেলতে যাচ্ছেন অলরাউন্ড পরিসংখ্যানের চূড়ায় থেকে। ২০২৩ বিশ্বকাপ তাকে দিচ্ছে আরও ওপরে যাওয়ার হাতছানি। অলরাউন্ড পরিসংখ্যানকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তার সামনে, যে উচ্চতা অতিক্রম করা দূরের কথা, আগামী প্রজন্মের তারকাদের জন্য সেই উচ্চতার দিকে তাকাতেও হয়তো ভয় করবে। সাকিবের সামনে সুযোগ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান ও সবচেয়ে বেশি উইকেটের তালিকাতেও আরও ওপরে ওঠার।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকার ৯ নম্বরে বিশ্বকাপটা শুরু করতে যাচ্ছেন সাকিব। শরীর সুস্থ রেখে বিশ্বকাপটা খেলতে পারলে তিনি যে নিশ্চিতভাবেই বর্তমানে ৮-এ থাকা জ্যাক ক্যালিস (১১৪৮), ৭-এ অবস্থান করা সনাত জয়াসুরিয়া (১১৬৫), ৬-এ থাকা ক্রিজ গেইল (১১৮৬) ও ৫-এ অবস্থান করা এবি ডি ভিলিয়ার্স (১২০৭) ও ৪ নম্বরে থাকা ব্রায়ান লারাকে (১২২৫) টপকে যাবেন, সেটি স্পষ্টই। ব্যাট হাতে একটু ভালো করলে টকানোর সুযোগ থাকতে তিন নম্বরে থাকা কুমার সাঙ্গাকারাকেও। তিনি বিশ্বকাপে ৩৭ ম্যাচে করেছেন ১৫৩২ রান। সাঙ্গাকারাকে টপকাতে হলে সাকিবকে করতে হবে ৩৮৭ রান। এমনকি ২০১৯ আসরের মতো বিস্ময় উপহার দিতে পারলে সাকিব পেছনে ফেলতে পারবেন দুই নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিংকেও। যিনি সর্বোচ্চ ৪৬ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৭৪৩ রান। তাকে টপকাতে হলে সাকিবকে করতে হবে ৫৯৭ রান। ২০২৯ বিশ্বকাপে তো এর চেয়েও বেশি করেছিলেন সাকিব, নাকি! তবে তালিকার শীর্ষে থাকা শচীন টেন্ডুলকারকে ছোঁয়া তো দূরের কথা, সেটা কল্পনা করাও কঠিন। ৪৫ ম্যাচে ২২৭৮ রান করা টেন্ডুলকারকে ছুঁতে যে সাকিবকে করতে হবে আরো ১১৩২ রান! আগের ৪ আসরে যিনি ১১৪৬ করেছেন, তার পক্ষে এক আসরেই ১১৩২ রান করা কল্পনারও বাইরে। এমনটা করতে হলে যে সাকিবকে প্রতি ম্যাচেই সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে হবে। যাই হোক, টেন্ডুলকার দূরে থাকুক, পন্টিং দূরের থাকুক। সাঙ্গাকারাকে টপকে তালিকার তিন নম্বরে ওঠাটাও হবে সাকিবের জন্য বিশাল ব্যাপার, বাংলাদেশের জন্যও। তবে হ্যাঁ, ভারত বিশ্বকাপে সাকিবের পেছন থেকেও অনেকের সুযোগ থাকছে তালিকার ওপরের দিকে যাওয়া করে নেওয়ার। যেমন ভারতের বিরাট কোহলি (২৬ ম্যাচে ১০৩০), অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার (১৮ ম্যাচে ৯৯২), ভারতের রোহিত শর্মা (১৭ ম্যাচে ৯৭৮), নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন (২৩ ম্যাচে ৯১১), বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিমরা (২৯ ম্যাচে ৮৭৭)।
ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও ওয়াহাব রিয়াজ (৩৫ উইকেট), ব্রেট লি (৩৫ উইকেট), জ্যাকব ওরাম (৩৬ উইকেট), ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৩৬ উইকেট), অ্যালান্ড ডোনাল্ড (৩৮ উইকেট), ইমরান তাহিরদের (৪০ উইকেট) পেছনে ফেলার সুযোগ আছে সাকিবের। এমনকি ১১ উইকেট পেলে টপকে যেতে পারবেন ভারতের জাভাগাল শ্রীনাথ, জহির খানদেরও। তারা দুজনেই নিয়েছেন ৪৪টি করে উইকেট। তার ওপরে যাওয়া সাকিবের জন্য কঠিনই হবে। বর্তমানে শ্রীনাথ-জহির খানের ওপরে থাকা চামিন্দা ভাসের দখলে যে আছে ৪৯ উইকেট। তাকে টপকাতে হলে সাকিবকে নিতে হবে ১৬ উইকেট। ভাসের সমান উইকেটের আরেক মালিক অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক তো এবার শুরুই করবেন ৪৯ উইকেট থেকে! তাদের ওপরে থাকা ওয়াসিম আকরাম (৫৫ উইকেট), লাসিথ মালিঙ্গা (৫৬ উইকেট), মুত্তিয়া মুরালিধরন (৬৮ উইকেট), গ্লেন ম্যাকগ্রাদের (সর্বোচ্চ ৭১ উইকেট) টপকানোর স্বপ্নটা স্টার্ক দেখতে পারেন, সাকিবের জন্য তা হবে অসম্ভব কল্পনা।
বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব
সব মিলে বিশ্বকাপে যে ২৯টি ম্যাচ খেলেছেন, তার মধ্যে ৭ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। ২০১১ বিশ্বকাপে ৬টি ম্যাচে, ২০১৫ বিশ্বকাপে একটিতে। ২০১১ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের নিয়মিত অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা; কিন্তু বিশ্বকাপের আগে চোটে পড়ায় কপাল খুল সাকিবের। মাশরাফি বিশ্বকাপের দল থেকে ছিটকে পড়ায় অধিনায়কত্ব পেয়ে যান সাকিব। ২০১৫ বিশ্বকাপেও মূল অধিনায়ক মাশরাফির অনুপস্থিতিতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে অধিনায়কত্ব করেন সাকিব। এবার সেই সাকিব মূল অধিনায়ক হিসেবেই যাচ্ছেন ভারত বিশ্বকাপে। তবে এক অর্থে এবারও কিন্তু সাকিবের অধিনায়কত্ব পাওয়াটা ভাগ্যের ফেরেই। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব ছিল তার কাঁধে। তা এখনো আছে। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ছিলেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপ সুপার লিগের মাধ্যমে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সেটা তামিমের নেতৃত্বেই; কিন্তু গত জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে আচমকাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও তামিম গত আগস্টে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন। সেই সুবাদে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য অধিনায়ক করা হয় সাকিবকে। এবার তাই সাকিবের অধিনায়ক হিসেবে বিশেষ কিছু করে দেখানোর পালা। কারণ, ২০১১ সালে অধিনায়ক হিসেবে দলকে বিশেষ চমক দিতে পারেননি। ৬ ম্যাচের ৩টিতে জিতলেও বাকি তিনটিতে হেরে যায় যাচ্ছেতাই ভাবে। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়ার সেই কষ্টের স্মৃতিও সাকিবের নেতৃত্বেই।
সাকিব কি এবার পারবেন আগের ব্যর্থতা মুছে এবার অধিনায়ক হিসেবে বিশেষ কিছু করে দেখাতে?