
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। ছবি: সংগৃহীত
অংশগ্রহণ: ১৩
সেরা সাফল্য চাম্পিয়ন: ৫ (১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১৫)
মোট ম্যাচ: ৭৯
জয়: ৪৫
হার: ৩২
নো রেজাল্ট: ২
বিশ্বকাপের সব থেকে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগের ১২ আসরের মধ্যে পাঁচবারই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অজিরা। ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ সালে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে তারা। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা, সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডও তাদের। মোট ৯৪টি ম্যাচ খেলেছে তারা। তার মধ্যে ৬৯টিতে জিতেছে। হেরেছে মাত্র ২৩টিতে। টাই করেছে ১টিতে ও পরিত্যক্ত ১টি ম্যাচ। ভারতের মাটিতে অক্টোবর-নভেম্বরে বসছে বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসর। এবারও যে অস্ট্রেলিয়া শিরোপার অন্যতম বড় দাবিদার, সেটি স্পষ্টই। তো এবারের আসরের জন্য ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। দলে যেমন অভিজ্ঞদের মিলনমেলা রয়েছে, তেমনি আছে তারুণ্যের সজীবতাও। তবে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অভিজ্ঞদের জায়গাই হয়েছে বেশি। এবারেরবিশ্বকাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল অস্ট্রেলিয়াই, সবচেয়ে বয়স্ক দলও তারা। দলটিতে ২৮ বছরের কম বয়সি খেলোয়াড় মাত্র একজন। সেই ক্যামেরন গ্রিনের বয়সও ২৪ বছরের ওপরে। ১৫ সদস্যের মধ্যে ১০ জনই বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। স্টিভেন স্মিথ আবার খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপ (২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯)। প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্ক, ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্তোইনিস, অ্যাডাম জাম্পা, অ্যালেক্স ক্যারি- প্রত্যেকেই বিশ্বকাপ খেলার রোমাঞ্চ গায়ে মাখিয়েছেন। পাশাপাশি ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, শন অ্যাবট, ক্যামেরন গ্রিন ও অ্যাস্টন অ্যাগাররা আছেন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপখেলার অপেক্ষায়। তবে বিশ্বকাপ না খেললেও শন অ্যাবট বাদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে তারা প্রত্যেকেই যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
অ্যালেক্স ক্যারি, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, ট্রাভিস হেডরা টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব নিবেন। পরের লাইনআপে থাকবেন মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্তোইনিস, ক্যামেরন গ্রিনরা। ফাস্ট বোলিং অপশনে নেতৃত্ব দিবেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এ ছাড়া থাকবেন জশ হ্যাজেলউড ও মিচেল স্টার্ক। নতুন বলে দারুণ শুরু করতে করতে তারা প্রস্তুত থাকেন সবসময়। নাথান এলিসের বদলে শন অ্যাবটকে রাখা হয়েছে আরেকটি পেস অপশন হিসেবে। স্পিনের দায়িত্ব থাকবে অ্যাস্টন অ্যাগার ও লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার ওপর। অ্যালেক্স ক্যারি ও জশ ইংলিস দুইজন আছেন উইকেটরক্ষকের দায়িত্বে। ক্যারি অবশ্যই প্রথম বিবেচনা হিসেবে একাদশে জায়গা রাখবেন। গত বিশ্বকাপে তার পারফর্ম ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডের তত্ত্বাবধানে অস্ট্রেলিয়ার দলটি সব দিক থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ। সব মিলিয়ে এবারও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার অজিরা।
দলীয় সর্বোচ্চ: ৪১৭/৬, ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পার্থে
দলীয় সর্বোচ্চ: ১২৯, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে চেমসফোর্ডে
বিশ্বকাপ দল: প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস (উইকেটরক্ষক), স্টিভেন স্মিথ, শন অ্যাবট, ক্যামেরন গ্রিন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অ্যাস্টন অ্যাগার, জশ হ্যাজলউডমিচেল, মার্শ মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্তোইনিস ও অ্যাডাম জাম্পা।
ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিং: ডেভিড ওয়ার্নার, ১৭৮
বিশ্বকাপে ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ানদের স্মরণীয় ইনিংস অনেকই আছে। তবে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের মালিক ডেভিড ওয়ার্নার। নিজেদের ঘরের মাটির ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৩৩ বলে ১৭৮ রানের ইনিংসটা খেলেছিলেন। ৫টি ছক্কা ও ১৯ চারে সাজানো ইনিংসটিতে চড়ে অসিরা গড়ে ৬ উইকেটে ৪১৭ রানের পুঁজি। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। সেদিন আফগানদের মাত্র ১৪২ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ওয়ার্নারের অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটাও জিতেছিল ২৭৫ রানে। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে রানের হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।
ব্যক্তিগত সেরা বোলিং: গ্লেন ম্যাকগ্রা, ৭/১৫
শুধু অস্ট্রেলিয়ানদের পক্ষে নয়, বিশ্বকাপের ইতিহাসেই ইনিংসে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গ্লেন ম্যাকগ্রার এই ১৫ রান খরচায় ৭ উইকেট দখল। কীর্তিটা তিনি গড়েছিলেন ২০০৩ বিশ্বকাপে, দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে, পুঁচকে নামিবিয়ার বিপক্ষে। ৩০২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা নামিবিয়াকে মাত্র ৪৫ রানে গুঁড়িয়ে দিতে ম্যাকগ্রা রেকর্ডটা গড়েছিলেন। ম্যাচে তার বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ৭-৪-১৫-৭! বিশ্বকাপের ইতিহাসে আরও তিনজনে (অ্যান্ডি বিকেল, টিম সাউদি ও উইনস্টোন ডেভিস) ম্যাচে ৭ উইকেট পেয়েছেন। তবে সবচেয়ে কম রান দিয়েছেন ম্যাকগ্রাই। ম্যাকগ্রা দাপটে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি জিতে ২৫৬ রানে।
প্যাট কামিন্স
২০২২ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক নির্বাচিত করে ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সকে। তার আগে অধিনায়ক ছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ; কিন্তু তিনি অবসর নেওয়ায় ওই চমকটা দেখায় অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক হিসেবে তিন ম্যাচ সিরিজের দুটিতে খেলে দুটিতেই দলকে জয় উপহার দেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়া সিরিজটাও জিতে ৩-০তে। কিন্তু হায়! অধিনায়কত্বের অভিষেকেই সফলতার মুখ দেখা কামিন্স এরপরই চোটে পড়েন। সেই চোটে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্তও মাঠে ফেরা হয়নি তার; কিন্ত কি দারুণ ব্যাপার, দীর্ঘদিন পর চোট থেকে ফিরেই আবার দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছেন কামিন্স। বিশ্বকাপের আগে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের বিশ্বকাপ-প্রস্তুতি সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপেও তার কাঁধেই নেতৃত্ব ভার দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ক্যারিয়ারে দুটি বিশ্বকাপ (২০১৫ ও ২০১৯) খেলে একবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন (২০১৫-তে)। দুই আসরে ১২ ম্যাচে ১৯ উইকেট নেওয়া কামিন্সের সামনে এবার সুযোগ সুযোগ্য নেতৃত্ব ও অগ্নি-ঝরা বোলিংয়ের মাধ্যমে দেশকে ষষ্ঠ বিশ্বকাপের স্বাদ পাইয়ে দেওয়ার।
অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচটি শিরোপার মালিক অস্ট্রেলিয়া আসন্ন বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া খেলতে যাচ্ছে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায় থেকে। অজিদের প্রধান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডের কাজটা ভয়ংকর চ্যালেঞ্জের। শিরোপা জিততে না পারাই হবে তার ব্যর্থতা। স্বাগতিক দেশে ১১টি আইপিএল ম্যাচ খেলেছেন। আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বোলিং কোচ আর রাজস্থান রয়্যালসের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। ভারতের কন্ডিশন সম্পর্কে তার ধারণা স্পষ্ট।
অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের সঙ্গে ম্যাকডোনাল্ড যুক্ত হন ২০১৯ সালের অক্টোবরে। শুরুতে জাস্টিন ল্যাঙ্গারের সহকারীর দায়িত্ব পান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বেচ্ছায় অজি দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব ছাড়েন ল্যাঙ্গার। আর প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ ম্যাকডোনাল্ড। তার অধীনে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় অজিরা। চলতি বছর জিতেছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। অস্ট্রেলিয়া দলে স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরি। ব্যাটিং কোচ সাবেক ওপেনার মাইকেল ডি বেনুতো।