
ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি। ছবি: সংগৃহীত
এবারের বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য সব রেকর্ড গড়ছেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি। অথচ তাকেই প্রথম তিন ম্যাচে দলের একাদশে সুযোগ দেয়া হয়নি।
এদিকে, মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই চলমান বিশ্বকাপের শীর্ষ উইকেট শিকারিদের দৌড়ে শামিল হয়ে গেছেন শামি।
বর্তমানে ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক শামি।
সাবেক ফাস্ট বোলার জহির খান ও জাভাগাল শ্রীনাথের নেয়া ৪৪ উইকেট পার করে শামির উইকেট সংখ্যা এখন ৪৫।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দশ উইকেট শিকারির তালিকায়ও আছেন মোহাম্মদ শামি।
চলমান ২০২৩ ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপে শামির গড় ৬.৭।
শামির প্রশংসা এখন ভারতজুড়ে
শ্রীলঙ্কার সাথে হওয়া ম্যাচের পর ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম জাফর নিজের ভেরিফাইড সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ’শামির বল এখন খেলাই যাচ্ছে না, অবিশ্বাস্য!’
আরেক সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেবাগ লিখেছেন, “ওয়াংখেডেকে ওয়াকা বানিয়ে দিয়েছে।”
প্রসঙ্গত, ওয়াকা অস্ট্রেলিয়ার পার্থের বিখ্যাত মাঠ, ঐতিহাসিকভাবেই ফাস্ট বোলাররা সেখানে সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং ব্যাটারদের জন্য অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি হয় এই মাঠে।
মোহাম্মদ শামিকে ‘জেনুইন ম্যাচ উইনার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফ।
ম্যাচ শেষে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছেন, ‘পরপর দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের সিম বোলাররা নিজেদের কোয়ালিটির প্রমাণ দিয়েছেন। উইকেটে যদি সুবিধা থাকে সেক্ষেত্রে তারা আরও ক্ষুরধার হয়ে যাবে।’
প্রথম তিন ম্যাচে একজন অতিরিক্ত ব্যাটারের জন্য শামিকে একাদশে রাখা হয়নি, ক্রিকবাজের আলোচনায় ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পার্থিব পাটেল বলেন, ‘শামি, বুমরাহ, সিরাজ থাকলে অতিরিক্ত ব্যাটারের প্রয়োজন আপনি অনুভবই করবেন না।’
আজ শামিকে নিয়ে ভারত জুড়ে এত হইচই; অথচ দুই বছর আগেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোহাম্মদ শামি গড়পড়তা পারফর্ম করায় ভারতের নেটিজেনদের একটা অংশ তার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছিল, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ধর্ম সম্পৃক্ত ঘৃণার বার্তা।
২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল, এরপর ভারতের দলে মোহাম্মদ শামিকে লক্ষ্যবস্তু করে অনলাইন আক্রমণ দেখা গিয়েছিল।
অনেকেই লিখেছিলেন যাতে শামিকে ভারত থেকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
তখন অবশ্য ভারতের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা শামির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তৎকালীন অধিনায়ক বিরাট কোহলি সংবাদ সম্মেলনে এসে শামিকে আগলে রাখার কথা বলেন এবং দলীয় পরাজয়ের দায় গোটা দলের বলে উল্লেখ করেন।
কিংবদন্তী ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার, ইরফান পাঠানদের সাথে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও মোহাম্মদ শামির পাশে দাঁড়ান, ভারতের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন যাতে তারা শামির প্রতি সম্মান দেখায়।
সেই সময় তীব্র ইসলামোফোবিয়ায় জেরে কটাক্ষের সম্মুখীন হওয়া শামিই এখন ভারতের ক্রিকেটে সাফল্য উদযাপনের কেন্দ্রে আছেন।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্ক
শুধু সমর্থকদের দুয়োধ্বনি ও ভালোবাসা নয়, শামির ক্যারিয়ারজুড়েই বিতর্ক ও নানা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল সঙ্গী।
২০১৬ সালে শামি তার তৎকালীন স্ত্রীর সাথে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘সুন্দর কিছু মুহূর্ত।’
কিন্তু এ ছবিটির ওপর কিছু লোক তাদের মন্তব্যে শামিকে 'ইসলাম অনুসরণ করার' এবং 'তার স্ত্রী যেন হিজাব এবং শালীন পোশাক পরেন তা নিশ্চিত করার' পরামর্শ দেন।
এর পর ক্ষুব্ধ ক্রিকেটার পাল্টা টুইট করেন: ‘আমি জানি আমার পরিবারের জন্য আমাকে কি করতে বা না করতে হবে।’
পরবর্তীতে একটা সময় শামির স্ত্রী হাসিন জাহানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে, শামির স্ত্রী শামির বিরুদ্ধে নির্যাতন ও ব্যাভিচারের অভিযোগ তুলেছিলেন ২০১৮ সালে।
হাসিন জাহান নিজের ফেসবুক পোস্টে সেই সময় এই অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মোহাম্মদ শামির সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন মেয়ের কথোপকথনের স্ক্রিনশট ও তাদের ছবিও প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছিলেন।
ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে হাসিন জাহান আরও জানিয়েছেন, তার ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার এখন এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি রাস্তা নেওয়া ছাড়া তার আর কোনও উপায় নেই।
তখন শামি একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
পরে ২০১৯ সালে শামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল, তবে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআই কখনোই এই বিষয়ে শামির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
২০১৮ সাল থেকে চলমান এই মামলা এখনও ভারতের কোর্টে চলছে, এই বিশ্বকাপের এক মাস আগে সেপ্টেম্বরেও শামি কোর্টে গিয়ে জামিন নিয়ে এসেছেন ২ হাজার রুপিতে।