
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব। ছবি: সংগৃহীত
একটা সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটে রাজত্ব করেছে ‘পঞ্চপাণ্ডব’। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, তামিম ইকবাল খান, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেই সম্মিলিতভাবে বলা হতো ‘পঞ্চপাণ্ডব’। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ হয়েছে মাশরাফি আর তামিমের অধ্যায়। চলতি বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মুশফিক। সাকিবও দেশের হয়ে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলবেন না। মাহমুদউল্লাহ বিদায় জানিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটকে। প্রশ্ন উঠেছে মাহমুদউল্লাহর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়েও।
ভারতের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে আছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে প্রথম ম্যাচে তিনি মাত্র ১ রানে আউট হয়েছেন। দল হেরেছে ৭ উইকেটে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরুর কথা বলা হচ্ছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত এবং শ্রীলংকার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তরুণ অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল রয়েছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়। জাকের আলী, পারভেজ হোসেন ইমন, রিশাদ হাসান, রকিবুল, তানজিম সাকিব, রানা নাহিদ আর তৌহিদ হৃদয়দের মতো তরুণদের গড়ে তোলা হচ্ছে। সাকিবের বিকল্প হিসেবে ভরসা মেহেদি হাসান মিরাজ। লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদরাই এখন দলের অভিজ্ঞদের কাতারে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) এসেছে বড় পরিবর্তন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পদত্যাগ করেছেন বিসিবি-প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। নতুন সভাপতি সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। সাবেক তারকা ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু পালন করছেন প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব। আপাতত বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের লক্ষ্য ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। স্বাভাবিকভাবেই প্রাধান্য পাচ্ছে তরুণরা। তাই ২০২৬-এ ৪০ বসন্ত পেরোনো মাহমুদউল্লাহ স্কোয়াডে টিকে থাকবেন কিনা প্রশ্নটা উঠছে জোরেশোরে। সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে নির্বাচকদের পরিকল্পনা স্পষ্ট করা উচিত। তিনি আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে ইনিংস খেলেছেন, ওই ইনিংসের পর নির্বাচকরা যদি বসে তার সঙ্গে কথা বলতেন, আমি নিশ্চিত তিনি নিজে থেকে সরে যেতেন। আমাদের বাকি ক্রিকেটাররা পারফর্ম না করায় বিষয়গুলো নিয়ে কেউ আলোচনাও করতে পারছে না। আমি অবাক হব না, মাহমুদউল্লাহ যদি ভারত সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেন।’
উল্লেখ্য, চলতি বছর জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার-৮ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ ৯ বলে ৬ রান করেন। টাইগার অধিনায়ক শান্ত জানিয়েছেন, ‘রিয়াদ ভাইয়ের ব্যাপারটা জটিল। ভারত সিরিজ তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার ধারণা, ভারত সিরিজ নিয়ে রিয়াদ ভাইয়ের বিষয়টি নির্বাচক আর বোর্ডের মধ্যে আলোচনা হবেই।’
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও ধারণা করছেন, ভারতের বিপক্ষে রিয়াদের বিদেশের মাটিতে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে ফেলছেন। তা ছাড়া বাস্তবতা হচ্ছে- টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার অ্যাপ্রোচ মানানসই না। বরং শামিম পাটোয়ারীর মতো তরুণদের মিডল অর্ডারে সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত। মাশরাফি থেকে শুরু করে মাহমুদউল্লাহ- সবাই দেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন; কিন্তু কিংবদন্তিদের বিদায়টাও অনিবার্য। তেমনি তরুণদের নিয়ে বাংলাদেশকেও শুরু করতে হবে নতুন যাত্রা।