
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
কী নামে ডাকি তোমায়? ম্যাচের বিবেচনায় দেশের দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভেন্যুর সামনে দাঁড়ালে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে কারো মনে। সহজ করে ডাকলে নাম ‘সাগরিকা স্টেডিয়াম’। তবে কাগজে-কলমে নামটা বদলেছে আরেকবার। নতুন নাম ‘বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়াম’।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের জন্য বাংলাদেশের দল ঘোষণার দিন জানা যায়, স্টেডিয়ামের নাম বদলের খবর। অবশ্য বাংলাদেশে বারবার নাম বদলের সংস্কৃতি বেশ পুরোনো। এই সাগরিকার কথাই ধরুন, নিজের ২১ বছরের ইতিহাসে এই নিয়ে নাম বদলেছে চারবার! ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পুরোদস্তুর আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের খেতাব পাওয়া এই সাগরিকার প্রথম নাম ছিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়াম। এরপর সেটা বদলে যায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিনের নামে। তৃতীয় ধাপে হয়, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। তৃতীয় নামটি যখন মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠছিল তখন খবর এলো আবারও নাম বদলের।
বারবার নাম বদলের হিড়িকের সঙ্গে স্টেডিয়ামটির সাজসজ্জাতেও এসেছে বারবার পরিবর্তন। আসন সংখ্যা ২২ হাজার থেকে এসে ঠেকেছে ১৮ হাজার ২৯১ জনে। আসনের রঙেও এসেছে পরিবর্তন। নীল আবরণ ছাপিয়ে এখন লাল, নীল আর সবুজের ছাপ।
২০০৪ সালে এই মাঠে প্রথমবার গড়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। যেখান থেকে বিশ্ব ক্রিকেট পায় অ্যালিস্টার কুক-শিখর ধাওয়ানদের মতো তারকাদের। এর পর থেকে কত ইতিহাসের সাক্ষী এই সাগরিকা! এখানেই নিজের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নিল ম্যাকেঞ্জি ও গ্রাহাম স্মিথ এই মাঠেই ওপেনিংয়ে ৪১৫ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন। এই দুটি কীর্তিই হয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। এখানেই অভিষেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরিতে (২১৭) ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান কাইল মায়ার্স। আর ২০০৬ সালে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে অজি পেসার জেসন গিলেস্পির সাগরিকাতেই করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি।
বিদেশিদের এত এত রেকর্ডের মাঝে বাংলাদেশিদেরও আছে খণ্ড খণ্ড সুখের মুহূর্ত। এই মাঠেই এক ইনিংসে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকসহ ছয় উইকেটের কীর্তি গড়েন সোহাগ গাজী, যা ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েছিলেন মুমিনুল হক। তবে এত এত রেকর্ড আর ইতিহাসের সাক্ষীর ভেন্যু নাম বদলের বাঁকে হারাচ্ছে ক্রিকেটীয় রং। গ্যালারির আসন নতুন রঙে রাঙলেও তাতে বসে তালি দেওয়ার মতো মানুষ নেই। অবশ্য তালি দেওয়ার মতো মুহূর্তও ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটে। লম্বা সময় বাজে পারফর্ম আর নানা বিতর্কের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে সত্যিকারের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা। সেটি ফেরানোর দায়িত্ব নিতে হবে ক্রিকেটারদেরই। তাদের পারফরম্যান্সই নতুন করে রাঙাবে সাগরিকাকে। রেকর্ডে রেকর্ডে নতুন করে পরিচিত হবে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম!