
৫৪ রানে অপরাজিত আছেন মাহমুদউল্লাহ।ছবি: এএফপি
হারারে টেস্টে সাকিব-মুশফিকের বিদায়ের পর বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে পথ দেখিয়ে শতক পূরণ না করার আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরলেন লিটন দাশ। মাত্র ৫ রান দূরে থেকে সেঞ্চুরি করতে না পারার দুঃখ নিয়ে ২২ গজ ছেড়েছেন লিটন।
১০৯ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন কক্ষচ্যুত, তখন ক্রিজে এসেছিলেন এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। স্কিপার মুমিনুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছেন। এরপর অধিনায়ক বিদায় নিলে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যান এই ক্রিকেটার।
রিয়াদের সঙ্গে ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথেই এগোচ্ছিলেন। ৯৫ রানে তখনও অপরাজিত। ৭৮ ওভার শেষে বল হাতে কোনো উইকেট না পাওয়া ডনাল্ড টিরিপানো।
বুক বরাবর প্রথম বল। পুল শট হাঁকালেন। বল চলে যায় সোজা নিয়াউচির হাতে। দলের সংগ্রহ যখন ২৭০ রান, সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে ক্রিজ ছাড়লেন এই ব্যাটসম্যান।
৮ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করে বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় দিন কতটা লড়াই করতে পারেন, তার ওপরই নির্ভর করছে টাইগারদের পুঁজিটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে।
হারারে টেস্টে প্রথম সেশনের চেয়ে দ্বিতীয় সেশনটা অপেক্ষাকৃত ভালো কেটেছিল বাংলাদেশের। প্রথম সেশনে ২৩ ওভারে ৭০ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা। দ্বিতীয় সেশনে ২৬ ওভারে রান তুলে ৯৭। উইকেট খোয়ায় আরও তিনটি। তৃতীয় সেশনটা কেটেছে তার চেয়েও ভালো। এই সেশনে ১২৭ রান যোগ করে ২ উইকেট হারিয়েছে মুমিনুল হকের দল।
হারারের অনেকটাই অপরিচিত উইকেটে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়েতে টেস্ট খেলতে যাওয়া সাইফ-শান্তরা যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ব্লেসিং মুজারবানির দারুণ এক ডেলিভারিতে বোকা বনেন সাইফ। ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন, ব্যাটটা যেন একটু দেরিতে আসে। আর ততক্ষণে বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানে সহজেই। টেস্ট ক্যারিয়ারের আট নম্বর ইনিংসে তৃতীয় শূন্যের দেখা পান সাইফ।
নাজমুল হোসেন শান্তও আরও একবার যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন, নতুন বলে তিনি বেশ বেমানান। মুজারবানিরই এক ডেলিভারি ডিফেন্ড করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, মাত্র ২ রান করে।
সেই জায়গা থেকে প্রতিরোধ মুমিনুল আর সাদমানের। তৃতীয় উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়েন তারা। সেই জুটিটি ভাঙে লাঞ্চের একটু আগে। এনগারাভার অফস্ট্যাম্পের চ্যানেলে করা বল সাদমানের ব্যাটে লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপে। ৬৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে বাঁহাতি এই ওপেনার তখন ২৩ রানে।
২৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতির পর অভিজ্ঞ মুমিনুল-মুশফিকের জুটিটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু হতাশ করেন মুশফিক।
মুজারবানির তৃতীয় শিকার হন টাইগার দলের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। লাইন বুঝতে না পেরে হাত উঁচু করে বলটি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন মুশফিক, কিন্তু সেটি আঘাত হানে প্যাডে। আবেদনে সঙ্গে সঙ্গে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। মুশফিক খুব একটা খুশি ছিলেন না, কিন্তু রিভিউ না থাকায় ১১ রানেই থামতে হয় তাকে।
এর পরের ওভারেই উইকেট বিলিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। নিয়াচির বাইরে থাকা বলটি স্কোয়ার ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, করেন ৩ রান। ১০৯ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এই দুই ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার আগেই অবশ্য হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল। ইনিংসের ২৭তম ওভারে মুজারবানিকে স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি পূরণ করেন টাইগার দলপতি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৮৩ ওভারে ২৯৪/৮ (লিটন দাস ৯৫, মুমিনুল হক ৭০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৫৪*, সাদমান ইসলাম ২৩, তাসকিন আহমেদ ১৩*; মুজারবানি ৩/৪৮)