
পাকিস্তান ক্রিকেট দল। ছবি: সংগৃহীত
অংশগ্রহণ: ১৩
সেরা সাফল্য চাম্পিয়ন: ১ (১৯৯২)
মোট ম্যাচ: ৭৯
জয়: ৪৫
হার: ৩২
নো রেজাল্ট : ২
‘আমরা এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যাব না’- ভারতের এই জেদের পাল্লা হিসেবে পাকিস্তানও গো ধরে বলেছিল- ‘তাহলে আমরাও বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাব না।’ কিন্তু আইসিসির আয়ের ৭০ শতাংশের বেশি আয় যেখানে ভারত থেকে আসে, সেখানে পাকিস্তানের জেদ কি করে ধোপে টিকে! টিকেওনি। ভারত নিজেদের জেদে জিতলেও পাকিস্তানকে ঠিকই হার মেনে ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে রাজি হতে হয়েছে। খেলতে যেহেতু আসছে, পাকিস্তান শিরোপারও অন্যতম দাবিদার। থাকছে টুর্নামেন্টের ‘টপ ফেবারিট’ তালিকায়; কিন্তু বিশ্বকাপের দল দিতে গিয়েই বড় একটা ধাক্কা খেতে হয়েছে পাকিস্তানকে। বর্তমান সময়ে দলের সেরা পেসার নাসিম শাহকে ছাড়াই বিশ্বকাপের দল দিতে হয়েছে পাকিস্তানকে।
গত মাসে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে ডান কাঁধে চোট পান নাসিম। তার সঙ্গে এশিয়া কাপে চোট পেয়েছিল দলের আরেক পেসার হারিস রউফও। তবে রউফকে ঠিকই বিশ্বকাপ দলে পেয়েছে পাকিস্তান; কিন্তু নাসিম শাহকে বাদ দিয়েই দিতে হয়েছে ১৫ সদস্যের দল। নাসিমের জায়গায় দলে নেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ হাসান আলিকে, যিনি খেলেছেন ২০১৯ বিশ্বকাপে। নাসিমকে পেলে পাকিস্তানের পেস আক্রমণ পরিপূর্ণ হতো। তবে তাকে ছাড়াও রউফ, শাহীন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলি, মোহাম্মদ ওয়াসিম ও মোহাম্মদ নওয়াজের সমন্বয়ে গড়া পাকিস্তানের পেস আক্রমণ যথেষ্টই শক্তিশালী। শাদাব খান, ইফতিখার আহমেদ, আগা সালমানের সঙ্গে তরুণ উসামা মিরের সমন্বয়ে পাকিস্তানের স্পিনও শক্তিশালী। ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক বাবর আজম, ইমাম-উল-হক, ফখর জামান, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সৌদ শাকিল-প্রত্যেকেই ফর্মে আছেন। ইফতিখার, নওয়াজ, আগা সালমান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, শাদাব খানরা বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও ভালোই পারেন। রিজার্ভ খেলোয়াড় হিসেবে নেওয়া ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হারিস, লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ ও পেসার জামান খানও যথেষ্ট প্রতিভাবান। এশিয়া কাপ বাদ দিলে দুর্দান্ত ফর্মেও রয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপ খেলতে নামছে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে থেকে। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেলে তৈরি দলটি প্রাণচঞ্চলে ভরপুর।
এই বছরেই কোচের দায়িত্ব নেওয়া নিউজিল্যান্ডের গ্র্যান্ট ব্র্যাডবার্ন এরই মধ্যে দলটিকে শৃঙ্খলার সুতোয় গাঁথার চেষ্টা করেছেন। একটু সমস্যা হলো ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দলের মাত্র ৬ জনের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাকি ৯ জনই বিশ্বকাপ খেলবেন প্রথম বারের মতো। তবে সেই নতুনেরা নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দিয়েই দলে জায়গা পেয়েছেন। যদি চিরশত্রু ভারতের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তান বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে মাতে, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
দলীয় সর্বোচ্চ: ৩৪৯, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, কিংসটন ওভালে ২০০৭ বিশ্বকাপ
দলীয় সর্বনিম্ন: ৭৪, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, অ্যাডিলেডে, ১৯৯২ বিশ্বকাপ। পাকিস্তান অলআউট হওয়ার পর ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়।
বিশ্বকাপ দল: বাবর আজম (অধিনায়ক), আব্দুল্লাহ শফিক, ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, সৌদ শাকিল, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), আগা সালমান, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ ওয়াসিম, শাদাব খান, শাহীন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলি, হারিস রউফ, উসামা মির।
ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিং: ইমরান নাজির, ১৬০
বিশ্বকাপে পাস্তিানের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ইমরান নাজিরের, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, কিংসটনে, ২০০৭ বিশ্বকাপে। ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথমে বেশ ধীরস্থিরই ছিলেন ইমরান নাজির। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে তার ব্যাটিং মেজাজ। ৫৭ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৯৫ বলে। পরের ৬০ রান করেন ২৬ বলে। সব মিলে ১২১ বলে খেলেন ১৬০ রানের ইনিংস। তার এই ইনিংসে চড়ে পাকিস্তান পায় ৩৪৯ রানের পুঁজি। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। পরে বৃষ্টির কারণে জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২০ ওভারে ১৯৩ রান। ৯৯ রানে গুটিয়ে গিয়ে জিম্বাবুয়ে ম্যাচ হারে বৃষ্টি আইনে ৯৩ রানে। ম্যাচসেরা হন ইমরান নাজির।
ব্যক্তিগত সেরা বোলিং: শাহীন শাহ আফ্রিদি, ৬/৩৫
ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার-যুগে যুগে কিংবদন্তি সব ফাস্ট বোলারের জন্ম দিয়েছে পাকিন্তান। তবে এদের কেউ নন, বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সেরা বোলিং কীর্তিটা গড়েছেন বর্তমান সময়ে পাকিস্তানের সেরা পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি। ২০১৯ বিশ্বকাপে লর্ডসে বাংলাদেশের বিপক্ষে। প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান করে পাকিস্তান। জবাবে শাহীন শাহ আফ্রিদির তোপে ২২১ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। শাহীন শাহ আফ্রিদি ৯.১ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে সাজ ঘরে ফেরান বাংলাদেশের ৬ ব্যাটসম্যানকে। যে কীর্তিটা তাকে পাইয়ে দিয়েছিল ম্যাচসেরার পুরস্কার।
বাবর আজম
নিশ্চিতভাবেই বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম। পাকিস্তান অধিনায়ক কাটাচ্ছেন ক্যারিয়ারে সোনালি সময়। তার ব্যাটে যেন রানের ফোয়ারা বইছে। অনবদ্য পারফরমেন্সে বিশ্বসেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যানের তকমা গায়ে জড়িয়েছেন বাবর। সম্প্রতি ইনিংসের হিসেবে দ্রুততম ১৯টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডটিও নিজের নামে করে নিয়েছেন তিনি। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলেছেন ২০১৯ সালে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপ মঞ্চে মাত্র ৮ ম্যাচে ব্যাট করে ৮৭.৭৭ স্ট্রাইক রেটে ৬৭.৭১ গড়ে করেছেন ৪৭৪ রান। আছে ১টি শতক ও ৩টি অর্ধশতক। দলের অধিনায়ক এবং বড় ব্যাটিং ভরসা হিসেবে আসন্ন বিশ্বকাপেও তার দিকেই তাকিয়ে থাকবেন পাকিস্তানিরা। ফর্মের ধারা ধরে রাখতে পারলে ২০২৩ বিশ^কাপটি হয়ে উঠতে পারে বাবর আজমের।
গ্রান্ট ব্রাডবার্ন
চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানের প্রধান কোচ হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন গ্রান্ট ব্রাডবার্ন। নিউজিল্যান্ডের এই কোচ ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ফিল্ডিং কোচ ছিলেন। এরপর স্থানীয় কোচদের নিয়ে কাজ করতে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে যোগ দেন তিনি।
ব্রাডবার্ন প্রধান কোচ হলেও পাকিস্তান দলের ডিরেক্টর মিকি আর্থার। দলগঠন, কোচিং পদ্ধতি কিংবা একাদশ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার অধিকারী দক্ষিণ আফ্রিকান আর্থার। তাই ব্রাডবার্নকে কাজ করতে হচ্ছে মিকি আর্থারের সঙ্গে সমন্বয় করে। পাকিস্তানের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন অ্যান্ড্রু পুটিক। বোলিং কোচ মর্নে মর্কেল। এ ছাড়া স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ ড্রিকুস সাইমান ও ফিজিও থেরাপিস্ট ক্লিফ ডিকন রয়েছেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সঙ্গে।
মিকি আর্থারকেই পাকিস্তান দলের প্রধান চরিত্র বলতে হবে। তিনি পাকিস্তানের হেড কোচ হিসেবে কাজ করেছেন ২০১৬-১৯ পর্যন্ত। তার অধীনে পাকিস্তান ২০১৭ সালে জিতেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
৫৫ বছর বয়সী মিকি আর্থার ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব ডার্বিশায়ারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তাই টেকনিক্যাল কারণে পাকিস্তানের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারছেন না তিনি। তবে ‘ডিরেক্টর’ হিসেবে তার নির্দেশেই চলবে দল।