
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পর অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তৃতীয় দেশ হিসেবে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল)। শুরুর সময়ে হিসেবে ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও তৃতীয় থেকে অনেকটাই নেমে গেছে মারকাটরি ক্রিকেটের এই আসর। সেখানে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা, শ্রীলঙ্কার লিগ জায়গা করে নিয়েছে। কোনো কাঠামো দাঁড় করাতে না পারা, অংশগ্রহণকারী দল পাকাপাকিভাবে ঠিক না হওয়া, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাকি থাকা যেন বিপিএলের নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এবার কোনো জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াই শুরু হয়েছে বিপিএলের দশম আসর। বৈশ্বিক ক্রিকেটারদের কাছে কুড়ি ওভারের এই আসর উপার্জনের বড় বাজার।
বিপিএল শুরুর আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ব্যস্ততায় ডুব দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেট। আগে থেকেই চলছে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশ লিগ (বিবিএল)। এরপর একই দিনে শুরু হয় বিপিএল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল লিগ (আইএল)। এ ছাড়া দেশের ক্রিকেটকে বিশ্বের কাছে মেলে ধরে পরিচিতির গণ্ডি বাড়িয়ে নেওয়ার মঞ্চও বলা চলে এটাকে। ৪০ দিন, ৪৬টি ম্যাচ, তিনটি ভেন্যুতে ১৯ জানুয়ারি খেলা শুরু হয়ে ১ মার্চ টুর্নামেন্ট শেষ হবে চ্যাম্পিয়ন দল খুঁজে নেওয়ার মধ্য দিয়ে।
বিপিএল দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় আসর হলেও বিসিবি কর্মকর্তাদের কাছে একটি বাণিজ্যিক টুর্নামেন্ট হিসেবে পরিচিত। ফ্র্যাঞ্চাইজি, খেলোয়াড়, খেলার মান নিয়ে যে আয়োজকরা ভাবেননি সেটা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। এ রকম নানা অভিযোগ-অনুযোগ মিলে একটা বড়সড় অপূর্ণতা মাথায় নিয়ে মাঠে গড়িয়েছে এবারের আসর। বিসিবি, ফ্র্যাঞ্চাইজি, ক্রিকেটার কারও মধ্যে নেই আগের সেই উত্তাপ। স্পন্সরের বাজার মন্দা, শুকনো মুখে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হাহাকারে প্রতিনিয়তই ভারী হচ্ছে দেশের ক্রিকেটপাড়া। অথচ বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলে খেলা, নাচ-গান মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভরপুর বিনোদনের আবেগ নিয়ে শুরু হতে পারত টুর্নামেন্ট। একাধিক বৈশ্বিক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিপিএলের হাত ধরাধরি করে সমসাময়িক সময়ে শুরু হওয়ায় বিদেশি কোটা উন্মুক্ত রেখেও খুব একটা লাভ হয়নি। এবারও মানহীন ক্রিকেটার দিয়ে দল সাজানো হয়েছে। স্বল্প বিনিয়োগে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাওয়া বিপিএলের ভাগ্যে কী আছে সেটা হয়তো সময়ই বলে দেবে।
৯ম পেরিয়ে ১০ম আসর শুরু হলেও বিপিএল এখনো ক্রিকেট লিগের চেয়ে ‘প্রবলেম লিগ’ হিসেবেই থেকে গেছে। এবার দুটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সাড়া ফেলেছে। একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ভ্যানে করে খেলোয়াড়দের কিটব্যাগ মাঠে আনছে, অন্যটি টুর্নামেন্টের একদিন আগে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন ফরচুন বরিশালের আইকন ক্রিকেটার ও অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার জন্য সামান্য একটা পোডিয়ামের জোগাড় করা হয়নি, কিছু বক্স জোড়াতালি দিয়ে সামনে টিভি চ্যানেলের বুমগুলো রেখে কাজ সারা হয়েছে।
২৮ নামে খেলেছে ৮ দল
নিয়ম করে ফ্র্যঞ্চাইজি ক্রিকেটে সাধারণত লম্বা সময়ের জন্য দলগুলোর মালিকানা দেওয়া হয়। আইপিএল, পিএসএল কিংবা বিগ ব্যাশে এমনটি হলেও ব্যতিক্রম কেবল বিপিএলে। নাম বদলের এই লড়াইয়ে যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা ও সিলেট। এই দুই বিভাগ রীতিমতো নাম বদলের এল ক্লাসিকোতে নেমে ১০টি আসরে খেলেছে সমান ছয়টি করে ভিন্ন ভিন্ন নামে। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস দিয়ে শুরু করে ডায়নামাইটস, প্লাটুন, ডমিনেটর্স হয়ে এবার দুর্দান্ততে এসে ঠেকেছে। আর সিলেট আগের ৯টি আসরে আটবার খেলেছে ভিন্ন ভিন্ন ৬ মালিকের অধীনে। সিলেট রয়্যালস দিয়ে শুরু করে একে একে সুপার স্টারস, সিক্সার্স, থান্ডার্স ও সানরাইজার্স থেকে এখন স্ট্রাইকার্স নামে খেলছে। নাম বদলের দিক থেকে এই দুই দলের পরই আছে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী। এই তিন দলই তিনবার করে নাম পরিবর্তন করেছে। রংপুর ও বরিশাল একবার করে নাম পরিবর্তন করেছে।
এদিকে আধুনিক বেশকিছু প্রযুক্তি এবার যুক্ত করা হয়েছে বিপিএলের ম্যাচ সম্প্রচারে। যা আইপিএল, বিগ ব্যাশের ছোঁয়া পেয়েছে। এ ছাড়া আশার কথা হচ্ছে, বিপিএলে আসতে চায় আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা! পিএসএল ছাড়া বিশ্বের বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই বিনিয়োগ করা আছে ভারতের। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক জানিয়েছেন, আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা বিনিয়োগ করতে আসতে চায় বিপিএলে। তারা নিতে চান না, কারণ তারা চান না যে কোনো কারণে বিপিএলের স্বত্ব যেন অন্য কারও হাতে চলে না যায়। প্রস্তাব এলেও বিসিবির সিদ্ধান্ত বাইরের দেশকে মালিকানা না দেওয়া।